সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের এখনও কিনারা হয়নি। সেদিন প্রশাসনিক দপ্তরের পাশাপাশি 'রহস্যময়' আগুন লেগেছিল সচিব নিবাসেও। যা নিয়ে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে জল্পনা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ নথি চাওয়ার পরই এই আগুন লাগায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে বিএনপি। নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারও। ইতিমধ্যে পুরনো তদন্ত কমিটি বদলে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিট নাগাদ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ১টা ৫৪ মিনিটে সেখানে পৌঁছয় দমকলবাহিনী ও পুলিশ। প্রথমে ৮টি ইঞ্জিন দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু আগুন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পরিস্থিতি বুঝে বাড়ানো হয় ইঞ্জিনের সংখ্যা। সব মিলিয়ে ১৯টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় ছয় ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ নিয়ন্ত্রণে আসে লেলিহান শিখা। প্রথমে এই ঘটনায় ৫ থেকে ১১ জন সদস্য নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি বাতিল করে ৮ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করেছে সরকার।
সূত্রের খবর, সচিবালয়ে আগুনে কয়েকটি মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পুড়ে গিয়েছে। তবে সচিবদের বাসভবনে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। জানা গিয়েছে, নয়া অনুসন্ধানকারী কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই কমিটি আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবে। ছুটির রাতে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে ৭ নম্বর ভবনের ছয়, সাত, আট, নয় মিলিয়ে মোট চারটি তলা। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ছয় তলায় আগুনের সূত্রপাত। সেখান বাকি তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে এসে প্রাণ হারান দমকল বিভাগের এক কর্মীও।
নানা মহল থেকে এই অগ্নিকাণ্ডকে রহস্যময় বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নানা প্রশ্ন উঠছে। সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন বিধ্বংসী আগুন লাগায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই ৯টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয় শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে। এই তালিকায় রয়েছেন বোন রেহানা ও বোনঝি টিউলিপ সিদ্দিকেও। যার তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই সংক্রান্ত নথিপত্র চাওয়া হয়। এই প্রসঙ্গ টেনেই সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে আজ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “চারদিকের বিভিন্ন ঘটনায় আমরা ভয়ার্ত। ব্যক্তিগতভাবে নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ভয়ার্ত। আমরা এর আগেও দেখেছি যখন কোনও মন্ত্রী-সচিবের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ আসে, তখন সচিবালয়ের ফাইল গায়েব হয়ে যায়। আগুন লেগে যায়। হাসিনা ও তার দোসরদের নথি চাওয়ার পর সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগা ও অনেক নথি পুড়ে যাওয়া দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।”
আগুন নেভার পর গতকাল সচিবালয় পরিদর্শনে যান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের অফিস দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়েন তিনি। বুধবার রাতে যখন সচিবালয়ে আগুন লাগে তখন সজীব ভূঁইয়া ছিলেন নীলফামারিতে। আগুনের খবর শুনে সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসেন ঢাকায়। দপ্তরে এসে সমস্ত কিছু দেখার পর তিনি বলেন, “আমাদের সব শেষ হয়ে গিয়েছে।” যতদিন না পর্যন্ত আগুন লাগার আসল কারণ প্রকাশ্যে আসছে ততদিন এমনই নানা জল্পনা চলবে বলে মত বিশ্লেষকদের।