সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাল্যবন্ধুর সঙ্গে প্রেমিকার নতুন করে সম্পর্ক, ত্রিকোণ প্রেমের সমীকরণ। এর মাঝে পড়ে চরম নৃশংসতার বলি হলেন ঢাকার এক ব্যবসায়ী। নিহত বছর বিয়াল্লিশের আশরাফুল হক। ঢাকার একটি মাঠে পড়ে থাকা ড্রাম থেকে বৃহস্পতিবার তাঁর দেহাংশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় অভিযুক্তদের জালে আনতে শুক্রবার ঢাকা এবং কুমিল্লায় অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার হয় নিহতের বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামিমা আক্তার। তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাবের দাবি, হত্যার প্রমাণও মিলেছে। এই ঘটনায় মনে করিয়ে দিচ্ছে কলকাতায় চিকিৎসা করতে আসা বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম ও কয়েক বছর আগে নিহত শ্রদ্ধা কাণ্ডের।
বৃহস্পতিবার ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে দুটো ড্রামের ভেতর থেকে আশরাফুলের মরদেহের ২৬ টুকরা উদ্ধারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। আশরাফুল হকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পিছনে ১০ লক্ষ টাকা ব্ল্যাকমেল পরিকল্পনা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে র্যাব। ধৃত আশরাফুলের বাল্যবন্ধু জরেজুলের তথ্যের ভিত্তিতে রক্তমাখা হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়। সে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বাড়ি রংপুরের একই গ্রামে। জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘বিগো লাইভে’ কুমিল্লার এক প্রবাসীর স্ত্রী শামিমা আক্তারের সঙ্গে জরেজুলের পরিচয় হয়। শামিমা দুই সন্তান নিয়ে কুমিল্লায় বসবাস করেন। একসময়ে জরেজুল ও শামিমা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। জরেজুল মাঝেমধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসতেন এবং শামিমার সঙ্গে সময় কাটাতেন।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর জরেজুল মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসে ঢাকার দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে শামিমাকে নিয়ে ওঠেন। এনিয়ে আশরাফুল, জরেজুল ও শামিমার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপরই আশরাফুলকে খুনের পরিকল্পনা করে শামিমা-জরেজুল। প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে এবং পরে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে আশরাফুলকে হত্যা করা হয়। পরিকল্পনা করে বুধবার রাতে লাশ ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরা হয়। পরদিন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি ভ্যানে তুলে ড্রাম দুটি ঢাকার জাতীয় ইদগা মাঠের গেটের কাছে ফেলে রেখে দুজনই কুমিল্লায় পালিয়ে যায়। ওইদিনই মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামে আশরাফুলের ২৬ টুকরো মরদেহ পাওয়া যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে দেহ শনাক্ত না হলেও পরে আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। আশরাফুল রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার ১০ বছরের একটি মেয়ে ও সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। আশরাফুলের বোন আনজিরা বেগম শুক্রবার শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হয়েছে জরেজুল, শামিমা।
