সুকুমার সরকার, ঢাকা: স্কুলে হিন্দু ছাত্রীদেরও হিজাব পরে আসার নির্দেশ! অভিযোগ পেয়ে বাংলাদেশের দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করল জেলা প্রশাসন। রংপুর মহানগরের ঘটনা এটি। এখানকার কামাল কাছনা এলাকার মোসলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে হিজাব পরা নিয়ে কয়েকজন হিন্দু ছাত্রী প্রতিবাদ করে। এই অভিযোগ পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে শিক্ষকদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জেলাশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বৃহস্পতিবার জানান, “মোসলেম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক হিন্দু সম্প্রদায়ের ছাত্রীদের হিজাব পরার কথা বলেছিলেন, গীতা পাঠের বিষয়েও বিভিন্ন কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে স্কুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে তাদের লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তার পর তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বুধবার সকালে শিক্ষার্থীদের সেই প্রতিবাদের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তার পরই বিকালে জেলাশাসকের কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পর পরই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মওলানা মোস্তাফিজার রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে দুই শিক্ষকই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সম্প্রতি স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে প্রধান শিক্ষক ও ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দুদেরও হিজাব পরে আসার নির্দেশ দেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে। তারা এ নিয়ে বুধবার স্কুল ক্যাম্পাসেও প্রতিবাদ জানায়।
এনিয়ে স্কুলের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যেও উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, রাজনৈতিক নেতা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ও অভিভাবকরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ভাইরাল ভিডিওতে এক ছাত্রী অভিযোগ করে বলে, তার শিক্ষক তাকে কোরানের সুরা মুখস্ত করতে এবং হিজাব পরতে বলেছেন। বলা হয়েছে, পর্দানসীন না হলে শরীর ছেলেরা দেখবে। ক্লাসে আবার স্যরেরা তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয় বলেও অভিযোগ। আরেকজন ছাত্রী বলে, “ক্লাসে আমাদের স্যার বলেন, তোমরা হিন্দু মেয়েরা কজন আছ, দাঁড়াও। বলল, তোমরা হিজাব পর না কেন? আমরা বলি, স্যর কেন আমরা হিজাব পরব? আমরা হিজাব পরব না, আমরা স্কার্ফ পরব। কিন্তু স্যর বলে, না, তোমরা হিজাব পরে আসবা।”
শিক্ষক ক্লাসে ‘বাজেভাবে’ তাদের সঙ্গে কথা বলে জানায় সেই ছাত্রী। কয়েকজন ছাত্রীর অভিযোগ, সেই শিক্ষকরা মূর্তি পুজো, হিন্দু ধর্ম নিয়েও নানা কথা বলে। অ্যাসেম্বলিতে শুধু কোরানে তেলাওয়াত করা হত। ছাত্রীরা বলেন, এনিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর গীতা পাঠ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার গীতা পাঠ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ঘটনার বিচার দাবি করে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় স্কুলে অভিভাবকরাও ছিলেন। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান। তিনি বলেন, “আমার স্কুলে মেয়েদের হিজাব নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমরা অ্যাসেম্বলিতে বলেছিলাম, মেয়েরা তোমরা স্কুল ড্রেসের সঙ্গে স্কার্ফ পরে আসবে। আমরা কখনো হিজাব পরার কথা বলিনি।”
তাহলে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অভিযোগ কেন করছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কয়েকমাস আগে একটি চাঁদাবাজ মহলের বিরুদ্ধে আমি থানায় মামলা করেছিলাম। তার কারণে এই কুচক্রী মহলটি স্কার্ফকে হিজাব বানিয়ে কোমলমতি ছাত্রীদের দিয়ে আমাদের হেনস্তা করার পাঁয়তারা করছে।” ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান প্রধান শিক্ষক। অপরদিকে, ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ভাই আমি ইসলাম ধর্মের ক্লাস নেই। আমি তো হিন্দু ধর্ম নেই না। একজন তার ভাইকে স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢুকাতে না পেরে এসব করছেন। তো আল্লাহ আছে, তার বিচার করবে। আর আমার বলার কিছু নেই।”