সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঢাকা সফরে আসছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তার আগে তিনি চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে চিঠি লিখেছেন। সেই বার্তায় জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশেই থাকবে রাষ্ট্রসংঘ। তবে এই মুহূর্তে গৃহযুদ্ধে পুড়ছে মায়ানমার। রাখাইন, মংডু-সহ একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর এখন বিদ্রোহীদের দখলে। অন্যান্য জায়গায় তাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে জুন্টা সরকারের। ফলে সংশয় রয়েছে, এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে গুতেরেসের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা কতটা মেটে।
জানা গিয়েছে, আগামী ১৩ মার্চ বাংলাদেশে যাবেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব গুতেরেস। তিনদিন তিনি ঢাকায় থাকবেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে খবর, ইউনুসের আমন্ত্রণেই ঢাকায় আসছেন গুতেরেস। এর আগে এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যার প্রভাব ও উদ্বেগ নিয়ে ইউনুসের সঙ্গে সহমত হয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব। এই ইস্যুকে রাষ্ট্রসংঘ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে বলে চিঠিতে জানিয়েছেন গুতেরেস।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে মায়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর সেখানে সরকার গঠন করে জুন্টা। গত আড়াই বছর ধরে তারাই চালাচ্ছে দেশ। সেই থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বার বার বিদ্রোহ হয়েছে মায়ানমারে। এর পর জোট বাঁধে তিন বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিএনএলএ (তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি), আরাকান আর্মি ও এমএনডিএএ (মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি)। এই জোটের নাম ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে বিদ্রোহী জোট শুরু করে ‘অপারেশন ১০২৭’। এর জেরে মায়ানমারের বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রবল বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। মায়ানমারের উত্তরের রাজ্য রাখাইনের দখল নিয়ে নেয় আরাকান আর্মি। এই রাখাইনই এখন গৃহযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু। প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে বাংলাদেশে।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীনও এই 'অনুপ্রবেশকারী' রোহিঙ্গাদের সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন। এই সমস্যা সমাধানে জুন্টা সরকারের সঙ্গেও চুক্তি করেন হাসিনা। সেই অনুযায়ী, প্রত্যেক বছর কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল জুন্টার। কিন্তু নথিপত্র ও নিয়মের জটিলতায় তা আর হয়নি। বরং যতদিন গিয়েছে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। এখন পদ্মা দিয়েও অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। 'গণ অভ্যুত্থানে' হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন ক্ষমতায় ইউনুস। ওদিকে, মায়ানমারেরও একের পর এক অঞ্চল দখল করে নিচ্ছে বিদ্রোহীরা। ফলে গুতেরেসের হস্তক্ষেপে জুন্টার সঙ্গে ইউনুসের চুক্তি হলেও বিদ্রোহীদের লড়াইয়ে তা কতটা কার্যকর হবে সেনিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
