কৃষ্ণকুমার দাস: মাশরফির পর সাকিব আল হাসান। দেশের ক্রিকেট টিমের পর পর দুই ক্যাপ্টেন শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) দলের প্রার্থী হয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রচারের শেষ লগ্নে ব্যস্ত। মাগুরা-১ সংসদীয় কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার পর আমেরিকায় ব্যক্তিগত সফরে চলে গিয়েছিলেন সাকিব। এলাকায় না থাকলেও নির্বাচনী কেন্দ্রে ইতিমধ্যে ছেয়ে গিয়েছে তাঁর ছবি ও কাটআউট। প্রথম দফায় না থাকলেও দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের তালিকা নিয়ে প্রচারের ময়দানে নেমে পড়েছেন বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই অলরাউন্ডার।
মঙ্গলবার ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় সাকিবকে ‘দেশের রত্ন’ হিসাবে তুলে ধরেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু কন্যা। বলেন,‘‘আমাদের একটা রত্ন আছে, এই রত্নটা ক্রিকেট রত্ন। মাগুরা-১ আসনে এবার নমিনেশন দিয়েছি-সাকিব আল হাসান। সে বলছে, বক্তৃতা দিতে পারে না। আমি বলেছি, বক্তৃতা দেওয়ার দরকার নেই। তুমি খালি বলবা যে, তুমি ছক্কা মারতে পারো, আর বল করে উইকেট ফেলে দিতে পারো, তাহলেই হবে। এইবারে ইলেকশনে ছক্কা মেরে দিও।” বস্তুত বিকেলে ফরিদপুরের জনসভায় শেখ হাসিনার ‘ছক্কা মেরে দিও’ বক্তৃতা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে দুই বাংলায় ভাইরাল হয়ে যায়। কারণ, একসময় কলকাতায় নাইট রাইডার্সের হয়ে বাঁহাতি বোলিং ও ব্যাটিংয়ে মাঠ কাঁপানো সাকিবের প্রচুর ফ্যান রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। পরে এদিন নির্বাচনী মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাকিব আওয়ামি লিগের নৌকা প্রতীক দেওয়া দলীয় প্রতাকা ওড়ান, পাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নাড়ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন: স্বরাষ্ট্রসচিব পদে নন্দিনীর নিয়োগকে ‘অবৈধ’ বলছেন শুভেন্দু, ‘ওর গা জ্বলছে’, পালটা কুণালের]
দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনের আগে শেষদফার প্রচারে জোর দিয়েছে একটানা ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ। প্রচারে রয়েছেন এরশাদের জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও। তবে প্রধান বিরোধী দল বেগম জিয়ার বিএনপি ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পাঁচদিন আগেও ভোট বয়কটের পথেই হাটছে। বিএনপি-জামাত জোট ভোটে অংশ না নিয়ে গত দুমাস ধরে তথাকথিত বন্ধ-অবরোধের ডাক দিলেও তার কোনও প্রভাব চোখে পড়েনি। নির্বাচন ঠেকাতে হস্তক্ষেপ চেয়ে রাষ্ট্রসংঘ-সহ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। যদিও দেশের অভ্যন্তরীণ ভোটে বিদেশিদের তৎপরতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ সরকার। তাই আওয়ামি লিগ-সহ ২৭টি দল প্রথম দিন থেকেই জোরকদমে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছে। তবে এবারের নির্বাচনে বড় আকর্ষণ নির্দল প্রার্থীরা। বেশ কিছু আসনে এই প্রার্থীরা স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমানে লড়াই চালাচ্ছেন।
সূত্রের খবর, দলীয় টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধ আওয়ামি লিগ নেতারাই এই নির্দল প্রার্থী হয়েছেন বলে দাবি। কোথাও কোথাও নির্বাচনপন্থী বিএনপি নেতারা এমন নির্দল প্রার্থী হয়েছেন বলে দাবি শাসকদলের। নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনও সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজি হাবিবুল আউয়ালের নির্দেশে ভোটের ময়দানে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে দেশের ৬২ জেলায় নামছে সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার থেকে দূরের জেলায় পৌঁছতে শুরু করছে এই সেনা। ৩ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনকে সাহায্য করবে এই সেনাবাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচন কমিশন এবার যে কতটা কঠোর তা এদিনই স্পষ্ট হয়েছে নির্দল প্রার্থী তথা যুবলিগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবনের প্রার্থীপদ বাতিল করায়। রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে ‘তিন দিনের মধ্যে বদলি করার হুমকি’ দেওয়ার পাশাপাশি ‘ভয়-ভীতি’ দেখিয়েছেন লক্ষ্মীপুর-১ আসনের প্রার্থী পবন।