অর্ক দে, বর্ধমান: কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে বসে ‘মাদক’ সেবন করছেন একদল পড়ুয়া। বুধবার রাতে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অভিযোগ, ওই ভাইরাল ভিডিওতে মাদক সেবন করতে দেখা গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরের ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত মহাবিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট সম্পাদক হিতেশ শেঠকে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধীরা রাজ্যের শাসক দলকে নিশানা করেছে এই ইস্যুতে। হিতেশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া, ক্যাম্পাস সেকেন্ড হোম তাই সেখানে মাদক সেবন করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে সাজিয়ে রাখা মদেল বোতলের ছবিও ভাইরাল হয়েছিল। এবার কলেজ ক্যাম্পাসের বসে মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল। যদিও সংবাদ প্রতিদিন সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতার হাসপাতালে প্রসূতিকে ‘ধর্ষণ’, বাধা দেওয়ায় খুনের চেষ্টা! প্রশ্নে নিরাপত্তা]
ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, হাট গোবিন্দপুর কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হিতেশ শেঠ একটি খোলা জায়গায় কয়েকজনের সঙ্গে বসে রয়েছেন। সেটা ওই কলেজের ক্যাম্পাস বলে জানা গিয়েছে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে সিগারেটে গাঁজার পুরিয়া ভরা হচ্ছে। তার পর তাতে ওই ছাত্র নেতা সহ কয়েকজন টান দিয়ে ধোঁয়া ওড়াচ্ছেন। অভিযোগ, কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে নিয়মিত মাদক সেবনের আসর বসে। আর সেখানে সশরীরে হাজির থাকেন কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরি বলেন, “এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। রাজ্যের প্রতিটি কলেজেই এই ঘটনা ঘটে চলেছে। অরাজকতায় ভরে উঠেছে কলেজ ক্যাম্পাসগুলি। পঠন পাঠনের থেকে মাদক সেবনই মুখ্য হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।” অন্যদিকে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি স্বরাজ ঘোষ দাবি করেন, “যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটির সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। কলেজ ক্যাম্পাসে মধ্যে এই ধরনের কাজের সঙ্গে কেউ যুক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে।” পাশাপাশি তিনি বলেছেন, “যে কলেজগুলিতে বিরোধীদের ছাত্র সংসদ রয়েছে সেখানে কী ধরনের নৈরাজ্য চলে সেটা আমরা সকলেই দেখেছি। মিথ্যা অভিযোগ করা তাদের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনেই ছাত্র সংসদের নির্বাচন রয়েছে তাই প্রচারের আলোতে আসতেই এই ধরনের অভিযোগ করছে তারা।”
[আরও পড়ুন: কলকাতায় চন্দনদস্যু! চিনে পাচারের ছক ভেস্তে দমদম বিমানবন্দরে অভিযান পুলিশের]
অভিযুক্ত ছাত্র নেতা হিতেশ অবশ্য এক-এক সময় এক রকম জবাব দিয়েছেন এই ভিডিওর বিষয়ে। এদিন তাঁর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “দেড় বছর আগের ভিডিও। সেটা আমাকে ফাঁসানোর জন্য এখন এইভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” পরে নিজেই আবার ফোন করে দাবি করেন, “ভিডিওতে এডিট করে আমার ছবি বসানো হয়েছে। আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” এদিকে, কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অর্ণব দত্ত বলেছেন, “আমি জিএস ছিলাম। প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি খুবই মর্মাহত। এই ধরনের ঘটনা কখনওই কাম্য নয়। কলেজটাকে বাঁচাতে সকলের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কলেজে একটি সবুজ ভবন আছে। সেটা ছাত্র সংসদ। ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে। এটা সত্যি হলে খুবই নক্ক্যারজনক ঘটনা।”
কলেজের অধ্যক্ষ অমলকুমার ঘোষ বলেন, “কলেজের কিছু পুরনো নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই সব করছে। আমি কঠোর হওয়ায় তারা চক্রান্ত করে কলেজকে বদনাম করতে চাইছে। আমি ভিডিও দেখিনি। তবে এখন অনেক কিছুই এডিট করে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়। কলেজ ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের মতো এমন কিছু ঘটেনি।”