সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: একটা আস্ত নিম গাছ তাঁর স্টাডি রুম। সেই স্টাডি রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বইপত্র। ইন্টারনেটের যুগে মোবাইল ফোন ছাড়া অনেক কিছুই অসম্ভব। বিশেষ করে আগ্রহী পড়ুয়াদের কাছে তো বটেই। তাই ইন্টারনেট সার্ভিস পেতে গাছেই ঘর বানিয়েছিলেন তিনি। চাকরির পরীক্ষায় সফল হওয়ার লক্ষ্যে গাছ ঘরে বসেই চলে নিত্যদিনের লেখাপড়া। এভাবে পড়াশোনা করে প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় সফল ওই যুবক।
বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির অধীন শিলদা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে রয়েছে জয়পুর গ্রাম। জঙ্গল ঘেরা গ্রাম। মোবাইলের নেটওয়ার্কের সমস্যায় জেরবার সেখানকার বাসিন্দারা। ফোনেও ভাল করে কথা বলা যায় না। ইন্টারনেট সংযোগ পেতে কালঘাম ছুটে যায়। সেই গ্রামেরই বাসিন্দা বছর সাতাশের বরুণ দাস। শিলদা রাধাচরণ ইন্সটিটিউট থেকে ২০১৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর শিলদা কলেজ থেকে বিএসসি নিয়ে স্নাতক। বিএডও করেছেন বরুণ।
[আরও পড়ুন: ‘নগ্ন ভিডিও তুলে মোটা টাকায় বিক্রি করেছে আদিল!’ স্বামীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ রাখির]
বছর চার বয়সে বাবা বাণীকুমার দাসকে হারান বরুণ। এক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। এক দাদা জন্ম থেকেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। মা তুলসি দাস তাঁদের বড় করেছেন। বরুণ টিউশন করে সংসার চালান। টিউশন করার পশাপাশি নিজেকে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। কিন্তু গ্রামে নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছিল। এরপরই এই প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য বাড়ির কাছে একটি নিম গাছের তিনটি ডালের মাঝে বস্তা, ত্রিপল, ফেস্টুন-সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে একটি ছোট ঘর বানিয়ে ফেলেন। করোনাকালে মূলত ঘরটি তৈরি করেন। ছোট ঘরে রয়েছে জানালা। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ত্রিপলের পর্দাও রয়েছে। দশজন বসতে পারেন এই গাছ ঘরে। গাছে ওঠার জন্য রয়েছে কাঠের সিঁড়িও।
আর এভাবেই বরুণ গত কয়েক বছর ধরে নিজের তৈরি গাছ ঘরে প্রকৃতির মাঝে থেকে নিজেকে প্রস্তুত করে চলেছেন। বরুণ বলেন, “আমাদের গ্রামে ফোনেও ভালভাবে কথা বলা যায় না। অথচ লেখাপড়ার জন্য আজকের দিনে ইন্টারনেট অত্যন্ত জরুরি। তাই আমি নিম গাছে ঘর বানিয়ে পড়াশোনা করি। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। গাছের উপর থেকে ইন্টারনেট ভাল পাওয়া যায়। প্রাথমিকে টেট পরীক্ষা দিয়েছিলাম।। আমি পাশ করেছি। খুবই আনন্দিত।” বর্তমানে যখন মোবাইল কারও কারও কাছে নিছকই বিনোদনের সামগ্রী, তখন জঙ্গলমহলের এই যুবক জ্ঞান অর্জনের তাগিদে যেন নজির গড়েছেন।