সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের কর্মবিরতির নির্দেশ নিয়ে তোলপাড় স্টুডিওপাড়া। ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে টলিপাড়ার অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন। এই তালিকায় যেমন রয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচালক, তেমনই রয়েছেন অঞ্জন দত্ত, ঋদ্ধি সেনরা।
নিয়ম বিরুদ্ধভাবে শুটিং করার অভিযোগে টলিপাড়ার পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে তিন মাসের কর্মবিরতির নির্দেশ দিয়েছে ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (FCTWEI)। যা শুরু হয়েছে ২০ জুলাই অর্থাৎ শনিবার থেকে। শেষ হবে আগামী ১৯ অক্টোবর। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যর পুজোর ছবি পরিচালনা করার কথা ছিল রাহুলের। তবে ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্তের পর পরিচালকের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে করা হয়েছে ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার। বৃহস্পতিবার বৈঠক ডেকেছে ডিরেক্টর্স গিল্ড।
এদিকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন টলিপাড়ার একাধিক তারকা। 'X' হ্যান্ডেলে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় লেখেন, "কাউকে নিষিদ্ধ করা কোনও সমস্যার সমাধান নয়, কারও কাজ করার অধিকার দমন করাও যায় না। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছি।"
[আরও পড়ুন: ঘরে-ঘরে জ্বর, ডেঙ্গু-টাইফয়েড নাকি ইনফ্লুয়েঞ্জা, বুঝবেন কীভাবে?]
বিষয়টিকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলেন অরিন্দম শীল। শাস্তির বৈধতা সম্পর্কে তিনি জানতে চান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ বন্ধ রাখার পক্ষপাতী নন সেকথাও সংবাদমাধ্যমকে জানান পরিচালক। পাশাপাশি এর দ্রুত সমাধান চাইছেন তিনি। এদিকে সোশাল মিডিয়ায় পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "...এ বিষয়ে রাহুল পরবর্তীতে লিখিতভাবে মার্জনা চাইলেও চলচ্চিত্রে ফেডারেশন শাস্তি দিয়েছেন রাহুলকে। আমি ফেডারেশনের তরফে রাহুলের বিরুদ্ধে এহেন পদক্ষেপের বিরুদ্ধমত প্রকাশ করি। তাঁকে তাঁর কাজ করতে নিঃশর্ত অনুমতি দেওয়া হোক - এই আবেদন রাখছি।"
বিষয়টি ‘ভয় দেখানো’র সমান বলেই মনে করেন অঞ্জন দত্ত। তিনি জানান, ফেডারেশনের নিয়ম মেনেই কাজ করা হয়। সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু সেটা মিটিয়ে নেওয়া উচিত। ঋদ্ধি সেন সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, "চিত্রপরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে ব্যান করেছে। শাস্তি দেওয়া? নীতিশিক্ষা? এই ফেডারেশন কে? এরা কি তালিবান নাকি সাম্প্রতিক ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর নিষেধাজ্ঞা মানা ফেসবুক আইটি সেলের বয়কট গ্যাং? এমনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের পরিধি মুম্বই বা সাউথ ইন্ডিয়ার মতন বৃহৎ নয়, তার দায় আমাদেরই। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি এক রাতের মধ্যে বদলে যেতে পারে না, এই সীমিত কাজের পরিসরের মধ্যে যদি কেউ ঠিক করে দিতে থাকে যে কোন শিল্পী বা সিনেকর্মী কোথায় কাজ করবে, কীভাবে কাজ করবে, কোন নিয়মে কাজ করবে আর সেই হাঁসজারু নিয়মাবলি না মানলেই যদি বয়কট বা স্কুলের মতো বা স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের মতো শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে সেই শিল্পী বা সিনে কর্মীদের সংসার চালানোর দায়িত্ব নেবেন তো ফেডারেশন? বহু বছর ধরেই ফেডারেশনের শিল্প, সংস্কৃতি, সিনেমা, শৈল্পিক প্রয়োজনীতা, সিনেমায় কাজ করার সঠিক বা বেঠিক পদ্ধতি সম্বন্ধে কোনো ধারণাই নেই। কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে মাস্তানি করে সিনেমা করা যায়? একটি শৈল্পিক পরিমণ্ডলে যদি এরা নিজেরাই শিল্পীদের কণ্ঠরোধ করে তাহলে কোথায় আর কবে গিয়ে কোনো সুস্থ পরিস্থিতি তৈরি হবে? কেন ক্ষমা চাইতে হবে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে? এই আইন কে তৈরি করেছে? ভারতীয় সংবিধান? এই ‘মতে মিললে চিরসখা অন্যথায় ফাঁসি’র মনোভাব বন্ধ হোক, রাহুল মুখোপাধ্যায়কে অবিলম্বে কাজে ফেরানো হোক।"