চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: নন্দীগ্রামে তৃণমূল কর্মী খুনে ধৃত ৩ জন। রবিবার গভীর রাতে কলকাতা থেকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্তরা নন্দীগ্রামের বাসিন্দা হলেও খুনের পর থেকে পলাতক ছিলেন তাঁরা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কলকাতার লেকটাউন এবং তোপসিয়া থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
ধৃতরা হল অর্জুন সেনা, শুভ সেনা এবং অর্জুন মাইতি। তিনজনের বাড়ি নন্দীগ্রামের গোকুলনগর এলাকায়। ২৫ ডিসেম্বর রাতে তৃণমূল কর্মী মহাদেব খুন হওয়ার পর থেকে পলাতক ছিলেন তিনজনই।
গোকুলনগরের বৃন্দাবনচক খাল পাড়ে সরকারি জায়গায় দোকান করার অভিযোগ তুলে তৃণমূল কর্মী মহাদেব বিশাইয়ের কাছ থেকে তোলা চেয়েছিল স্থানীয় বিজেপি নেতা কর্মীরা। কিন্তু তাদের সেই দাবি মেটাতে চাননি মহাদেব। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে যখন সকলে আনন্দে মশগুল, সেই দিনই মহাদেবকে খুনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হয়। গোকুলনগরের বৃন্দাবনচক খালপাড়ে চা, তেলেভাজা এবং মাংসের দোকান ছিল তাঁর । বড়দিনে বেশ ভালোই বিক্রি হয়েছিল। বিক্রির বহর বুঝে ৫০ হাজার টাকা তোলা চেয়েছিল স্থানীয় বিজেপি নেতা কর্মীরা। কিন্তু তোলা দিতে চায়নি মহাদেব। তার জেরেই খুন করা হয়েছে বলে দাবি মৃতের পরিবারের। ঘটনায় স্থানীয় ৩৯ জন বিজেপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মহাদেবের ভাই জয়দেব বিশাই। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা, গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত বিজেপি জনপ্রতিনিধি ভোলানাথ কামিলা, স্থানীয় বিজেপি নেতা অনুপ মাইতি, প্রসেনজিৎ মাইতি, নন্দীগ্রাম ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধ্যক্ষ সাহেব দাস, বিজেপির নন্দীগ্রাম তিন নম্বর মন্ডল সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মাইতি। ঘটনার পর দোষী ব্যক্তিদের হন্যে হয়ে খুঁজেছে পুলিশ। দক্ষিণবঙ্গ সহ পাশের রাজ্য ওড়িশায় পর্যন্ত পুলিশ তদন্তের অভিযান চালিয়েছে । কিন্তু ঘটনার চারদিন কেটে যাওয়ার পর দোষীদের কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর পঞ্চম দিনে কলকাতা থেকে পাকড়াও করা হয় বিজেপির নেতা অর্জুন সেনা, শুভ মাইতি এবং অর্জুন মাইতিকে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) মনোরঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন,"পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ টিম কলকাতায় অভিযান চালিয়েছে। লেকটাউন এবং তোপসিয়ায় ফুলের কাজের কর্মী হিসেবে গা ঢাকা দিয়েছিল । কিন্তু পুলিশের চোখ এড়িয়ে তারা থাকতে পারেনি । তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।" তবে এই গ্রেপ্তারির ঘটনা রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে মনে করছেন নন্দীগ্রামের বিজেপির নেতারা।
স্থানীয় বিজেপি নেতা মেঘনাদ পাল জানিয়েছেন,"খুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষী কারা, সেটা তদন্ত হোক আমরাও চাই। কিন্তু যেভাবে পুলিশ আমাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে এটা পরিকল্পিত হলে মনে করছি ।" নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জোরের সঙ্গে বলেন,"গোকুলনগর আমাদের দলীয় কর্মী মহাদেব বিশাইকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। বিজেপির নেতাকর্মীরাই সেই কাজ করেছে। তার বহু প্রমাণ রয়েছে। অভিযুক্তদের তালিকায় ৩৯ জন বিজেপি নেতাকর্মী নাম রয়েছে। প্রত্যেককে ধরে কঠিন সাজা দেওয়া হোক। নন্দীগ্রামের রাজনীতির নামে খুন সন্ত্রাসের পরিবেশ চাই না।" অভিযুক্তদের তালিকা অনুযায়ী মাত্র তিনজন ধরা পড়েছে। বাকি ৩৬ জনের খোঁজে জারি রয়েছে পুলিশে অভিযান।