রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: আগস্টের পর নভেম্বর। মাত্র মাস চারেকের ব্যবধানে একই সঙ্গে তিনটি হাতির প্রাণহানি। মালগাড়ির ধাক্কার পর প্রায় ৬১ মিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় শাবক-সহ তিন হাতিকে। দুর্ঘটনাস্থলে ছিল না IDS বা ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম। প্রযুক্তির অভাব নাকি মালগাড়ির গতি বেশি থাকায় দুর্ঘটনা? আরও একবার রেল এবং বনদপ্তরের সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু উত্তরবঙ্গে লেগেই থাকে। তথ্য বলছে, গত ২০০৯-২০১৯ সাল পর্যন্ত শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার রেলপথে প্রায় ৬০টি হাতির প্রাণ গিয়েছে। তার পরেও হাতিমৃত্যু রোখা যায়নি। চলতি বছরের ১০ আগস্ট চাপরামারিতে অন্তঃসত্ত্বা হাতির মৃত্যু হয়। তার তিন মাসের মধ্যে আবার প্রাণ গেল তিনটি হাতির। রেলের তরফে হাতিমৃত্যু রুখতে IDS বা ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেমকে কাজে লাগানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: মদের পর বিষপান! তরল বের করেও বাঁচানো গেল না যুবককে]
IDS-এর মাধ্যমে রেললাইনের আশেপাশে হাতি আনাগোনার খবর প্রায় এক কিলোমিটার অবধি পাওয়ার কথা। তাতে সতর্ক হবেন ট্রেনচালকরা। ১৬০ কিলোমিটার বিস্তৃত আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত IDS প্রযুক্তি ব্যবহারের ভাবনা। তবে রেল সূত্রে খবর, মাদারিহাট থেকে নাগরাকাটা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ছিল না ইন্ট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম। সোমবার সকালের ওই দুর্ঘটনাস্থলেও ছিল না এই নয়া প্রযুক্তি।
সূত্রের খবর, ধাক্কার পর শাবক-সহ দুটি পূর্ণবয়স্ক হাতির দেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় মালগাড়ি। আনুমানিক প্রায় ৬১ মিটার টেনে নিয়ে যাওয়া হয় তিনটি দেহ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মালগাড়ির গতিবেগ অত্যন্ত বেশি না থাকলে এত দূর হাতির দেহ টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হত না। রেলের নিয়ম অনুযায়ী, হুইসল দিতে দিতে জঙ্গলের ভিতরে থাকা হাতি করিডোরে ঘণ্টায় ২০-৩০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলার কথা। তবে কি নিয়ম না মানায় এই দুর্ঘটনা, উঠছে প্রশ্ন।
রেল এবং বনদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় নিয়েও ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই ঘটনায় রেলের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অতীতে বার বারই দাবি করা হয়েছে, বনদপ্তরের তরফে হাতি আনাগোনার খবর ঠিকমতো জানানো হয় না রেল কর্তৃপক্ষকে। আর প্রাণ দিয়ে তার খেসারত দিতে হয় হাতিদের। এই তিন হাতির মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে। এদিকে, ঘাতক মালগাড়িটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।