শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: চোরের অপবাদ দিয়ে এক মাছ ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রাতভর বেধড়ক পিটিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করল স্থানীয় একদল বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের গৌরী পঞ্চায়েতের ইটাল গ্রামে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। নিহতের নাম রহিম আলি (৪২)। সময়মতো ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলে প্রাণে বাঁচানো যেত বলে নিহতের পরিবারের দাবি। তবে এদিন সকালে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছনোর আগেই সব শেষ যায়। এই ঘটনায় নিহতের পরিবারের তরফে দশজন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার সন্ধেয় স্থানীয় ইটাল গ্রামের কৃষিজমি থেকে জলসেচের এক পাম্পসেট চুরি হয়েছে বলে রটে যায়। ঘটনাস্থল থেকে অর্ধেক কিলোমিটার দূরে মাছ ব্যবসায়ী রহিম আলির বাড়ি। তারপর রাত বারোটার পর রহিমকে বাড়ি থেকে ডেকে ওই কৃষিজমিতে নিয়ে যায় স্থানীয় একদল গ্রামবাসী। এরপর লাঠি আর পাথর দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাগাড়ে মারধর শুরু করে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। খবর পেয়ে দাদাকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও উন্মত্ত জনতা বাধা দেয়।
[আরও পড়ুন: ঘুচল আট বছর আগের ‘কলঙ্ক’, হিংসা ভুলে চিতাবাঘের ঘর-সংসার আগলে সিমনির বাসিন্দারা]
এমনকি মৃত্যুর আগে তেষ্টায় একফোঁটা খাবার জলের জন্য কাতরভাবে আবেদন করলে ‘প্রস্রাব’ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের মর্গে দাঁড়িয়ে নিহতের ভাই আজিজুল হকের অভিযোগ,” আমার দাদাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। অনেকদিন আগে গ্রামের এক বাসিন্দার সঙ্গে গোলমাল হয়েছিল, সম্ভবত সে কারণে হয়ত এই ঘটনা। পাম্পসেট চুরি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, জমির মধ্যে সেই পাম্পসেট অক্ষত রয়েছে। তাছাড়া আমার দাদা মাছের ব্যবসা করে। দাদা কোন দল করে না। তবে স্থানীয় তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে।
এই ঘটনায় রায়গঞ্জ পুলিশ সুপার সানা আকতার বলেন,”এক ব্যক্তি একটি পাম্পসেট চুরির চেষ্টা করছিল,কিন্তু শেষপর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে ধরে মারধর করে কয়েকজন গ্রামবাসী। তারপর মারা যান তিনি। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।” পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করছে।
