সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: জলদস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে গভীর সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন মৎস্যজীবী। ভেবেছিলেন এ যাত্রায় হয়তো আর বাঁচল না প্রাণ। সাঁতার কাটতে শুরু করেন মৎস্যজীবী। খিদে-তেষ্টায় অবসন্ন অবস্থায় কেন্দুয়া দ্বীপে গিয়ে ওঠেন তিনি। ভারতীয় ট্রলারের মৎস্যজীবীদের সাহায্যে প্রাণে বাঁচলেন ওই বিপদগ্রস্ত। মহম্মদ নিজামুদ্দিন এই মৎস্যজীবী বেঁচে ফেরার পর অনেকেই বলছেন, রাখে হরি তো মারে কে?
[আরও পড়ুন: বেলেঘাটার মণ্ডপে যাবে ১০ ফুটের ডোকরার দুর্গা, ব্যস্ততা তুঙ্গে আউশগ্রামের শিল্পীদের]
ভারত-বাংলাদেশ জলসীমায় অন্য মৎস্যজীবীদের সঙ্গে ইলিশ ধরছিলেন মহম্মদ নিজামুদ্দিন। হঠাৎই তাদের একদল জলদস্যু তাঁদের ট্রলারে হামলা চালায়।মৎস্যজীবীদের ইলিশের জাল কেটে দেয়। ট্রলারে উঠে মৎস্যজীবীদের মারধর করতে শুরু করেন। জীবন বাঁচাতে ওই মৎস্যজীবীদের কেউ ঝাঁপ দেয় জলে, কেউ আবার ট্রলারের কেবিনে গিয়ে লুকিয়ে পড়েন। এই পর্যন্ত বলেই বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েন নিজামুদ্দিন। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বলেন, “জলদস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে আরেক মৎস্যজীবীর সঙ্গে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। গভীর অন্ধকারের মধ্যে দু’জনে ভাসতে থাকি। একসময় আর সঙ্গীর কোনও খোঁজ পাইনি। বাধ্য হয়ে একাই ভাসতে থাকি। কোথায় যাচ্ছি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল আর বোধহয় বাঁচব না।”
[আরও পড়ুন: নরবলি নাকি অন্য কিছু? দুর্গাপুরে তরুণীকে অপহরণের চেষ্টার কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা]
কথায় বলে রাখে হরি তো মারে কে? নিজামুদ্দিনের ক্ষেত্রেও বোধহয় সেই প্রবাদ বাক্যই বাস্তব হয়ে উঠল। বিরাট ঢেউয়ের ধাক্কায় একসময় ওই মৎস্যজীবী উঠলেন গভীর জঙ্গলে ঢাকা নির্জন দ্বীপের চড়ায়। খিদে এবং তেষ্টায় তখন তাঁর প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কোনও কিছু না ভেবেই সমুদ্রের নোনা জল খেয়ে নেন। সারারাত তার কেটে যায় অন্ধকার দ্বীপে। কয়েকঘণ্টা পর সবে সকালের আলো ফুটেছে। নিজামুদ্দিন তখনও জানেন না তিনি কোথায় আছেন। সমুদ্রে একটি ট্রলার দেখতে পান। উদ্ধার করার জন্য চিৎকার করতে থাকেন নিজামুদ্দিন। ওই ট্রলারে থাকা মৎস্যজীবীর কানে যায় কাতর আর্তি। সঙ্গে সঙ্গে নিজামুদ্দিনের কাছে গিয়ে পৌঁছন তিনি। উদ্ধার করা হয় তাঁকে।
[আরও পড়ুন: আয় বাড়াতে মিড-ডে মিল রাঁধুনিদের ১০০ দিনের কাজে যুক্ত করার ভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর]
উদ্ধাকারী ভারতীয় ট্রলার ‘মা মণিমালা’র মৎস্যজীবীরা নিজামুদ্দিনকে জানান, তিনি জলের স্রোতে কেন্দুয়া দ্বীপে এসে পৌঁছেছেন। ট্রলারে তুলে ভারতীয় মৎস্যজীবীরা তাঁকে শুকনো জামাকাপড় ও খাবার দেন। বুধবার দুপুরে ট্রলারটি পৌঁছায় রায়দিঘির ফেরিঘাটে। উদ্ধার হওয়া ওই বাংলাদেশী মৎস্যজীবীকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় হাসপাতালে। বর্তমানে সুস্থই রয়েছেন নিজামুদ্দিন। উদ্ধারকারীদের ভগবানের সঙ্গে তুলনা করে নিজামুদ্দিন বলেন,“আমার বিশ্বাস, ওপরওয়ালাই ওদের পাঠিয়েছিলেন আমার জীবনটাকে বাঁচাতে। ওদের কাছে আমি চিরঋণী।”
The post জলদস্যুর হাত থেকে বাঁচতে মাঝসমুদ্রে ঝাঁপ, সাঁতার কেটে মৃত্যুঞ্জয়ী মৎস্যজীবী appeared first on Sangbad Pratidin.
