shono
Advertisement

প্রদীপ থেকে শাড়িতে আগুন, প্রথমবার সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দিতে গিয়ে মৃত্যু খুদের

মেয়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন শিশুর মা। The post প্রদীপ থেকে শাড়িতে আগুন, প্রথমবার সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দিতে গিয়ে মৃত্যু খুদের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:37 AM Jan 31, 2020Updated: 09:38 AM Jan 31, 2020

শুভদীপ রায় নন্দী, শিলিগুড়ি: লাল পেড়ে হলুদ শাড়িটা বুকের কাছে আঁকড়ে ধরেই মঙ্গলবার রাতে ঘুমিয়েছিল ছোট্ট বর্ণালী। স্কুলে ভরতির পর এই প্রথম সরস্বতী পুজো বলে কথা! শাড়ি পড়ে অঞ্জলি তাই দেওয়া চাই-ই। মেয়ের বায়না মেনে বাবা ওই শাড়ি কিনে এনেছিলেন। বুধবার সকালে ঠাকুরমার পরিয়ে দেওয়া সেই শাড়ি আর পরচুলার লম্বা চুলে সেজেই পাড়ার মণ্ডপে অঞ্জলি দিতে গিয়েছিল চার বছরের ওই একরত্তি মেয়ে। কিন্তু আর ফেরেনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঠাকুরনগরের ভবেশ মোড়ের বাড়িতে ফিরল তার নিথর দেহ। প্রতিমার সামনে থেকে বই সরাতে গিয়ে আচমকাই প্রদীপের আগুন ধরে যায় বর্ণালীর শাড়ি আর পরচুলায়। তারপর ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে সব শেষ!

Advertisement

মেয়ের মৃত্যুর খবর শোনা ইস্তক ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন মা বীণা সরকার। যাকে হাতে করে সাজিয়ে মণ্ডপে পাঠিয়েছিলেন, সেই একরত্তি নাতনি আর ফিরবে না জেনে কান্নায় ভাসছেন ঠাকুরমা সুষমা সরকার। একটানা বলে চলেছেন, “পাশের বাড়িতে প্রসাদ দিয়ে এসে দেখি ওর শাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছে। আমি বুকে জাপটে ধরে চিৎকার করে ছুটি। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।” মর্মান্তিক এই ঘটনায় পুজো বন্ধ করে দিয়েছেন ভবেশ মোড়ের শোকাতুর বাসিন্দারা। বাড়ির উঠোনে ভেঙে পড়া গোটা পাড়াকে সাক্ষী করে বর্ণালীর বাবা বিশ্বনাথ সরকার শুধু বিড়বিড় করে চলেছেন, “সারাটা রাত আমার মেয়ে শাড়ি পরার আনন্দে ঘুমোতে পারেনি। আর সেই শাড়িই আমার মেয়ের প্রাণ নিয়ে নিল।”

[আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশে সংশোধনাগারেই বসল আসর, নির্যাতিতাকে বিয়ে অভিযুক্ত যুবকের]

শিলিগুড়ি সংলগ্ন ডাবগ্রাম ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠাকুরনগরের ভবেশ মোড়ের বাসিন্দা বিশ্বনাথ ও বীণা সরকারের একমাত্র আদরের মেয়ে বর্ণালী। গত বছর সরস্বতী পুজোয় হাতে খড়ি হয়েছিল তার। তারপর পাড়ারই কিশলয় নামে একটি প্রাথমিক স্কুলে নার্সারিতে ভরতি হয় সে। সরস্বতী পুজোয় মেয়ের শাড়ি পড়ার বায়না মেটাতে ৬০০ টাকা দিয়ে হলুদ রঙের লাল পাড়ের শাড়ি ও পরচুলা কিনে এনেছিলেন বিশ্বনাথবাবু। সেই শাড়ি পরেই ছোট্ট বর্ণালী বুধবার মণ্ডপে অঞ্জলিও দিয়েছিল সকলের সঙ্গে। দুপুরে মা চলে এসেছিলেন বাড়িতে। ঠাকুরমা গিয়েছিলেন পড়শির বাড়িতে। মণ্ডপে খেলতে খেলতে হঠাৎই প্রতিমার সামনে থেকে বই সরানোর কথা মনে পড়ে তার। আর সেই বই সরাতে গিয়েই জ্বলন্ত প্রদীপের আগুনে ঝলসে যায় একরত্তি মেয়ে। সম্ভবত ভয়ে সে শাড়িতে আগুন ধরেছে দেখেও চিৎকার করতে পারেনি।

ঠাকুরমা মণ্ডপে ফিরে নাতনিকে ওই অবস্থায় দেখে চিৎকার করে ওঠেন। ছুটে আসেন প্রতিবেশীরাও। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অগ্নিদগ্ধ বর্ণালীকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল নিয়ে গেলে হাসপাতালে বার্ণ ইউনিট না থাকায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু পরিবারের লোকজন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে ওই শিশুকে নিয়ে দু’তিনটে নার্সিংহোমে ভরতির চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনও নার্সিংহোমেই ছুটির দিন চিকিৎসক না থাকায় ভরতি করানো যায়নি। শেষে বিকেল নাগাদ বর্ণালীকে মেডিক্যাল কলেজে ভরতি করা হয়। সেখানেই রাত দেড়টা নাগাদ মৃত্যু হয় তার। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

The post প্রদীপ থেকে শাড়িতে আগুন, প্রথমবার সরস্বতী পুজোয় অঞ্জলি দিতে গিয়ে মৃত্যু খুদের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement