সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কথায় আছে, ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়’। প্রবাদই সত্যি করে দেখাল দুর্গাপুর-ফরিদপুরের জেমুয়া ভাদুবালা উচ্চ বিদ্যালয়। শুধু অষ্টম নয়, স্কুলের বাগানের সবজি দিয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিল চলছে এই স্কুলে। লক্ষ্য পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা।
দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া ভাদুবালা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৩ সালে। এখন ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ১০০৭ জন। শিক্ষিক রয়েছেন ১৮ জন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের স্কুলে প্রায়ই মিড-ডে মিলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তবে এই স্কুলের ছবিটা একেবারে অন্য। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শুধু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তই নয়, স্কুলের বাগানে চাষ করে সেই সবজি দিয়ে মিড-ডে মিল খাওয়ানো হয় একেবারে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। জানা গিয়েছে, প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে পড়ুয়ারা স্কুলের সবজি বাগান পরিচর্যার কাজে হাত লাগায়। এই মরশুমে চাষ করা হয়েছে আলু, পেঁয়াজ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, পেঁয়াজ-সহ ২০ প্রজাতির সবজি। কিন্তু এতো হল সবজি। বাকি যোগান দেয় কে? শিক্ষকরা জানান, পঞ্চম থেকে অষ্টম পড়ুয়াদের সবজি কিনতে হয় না। প্রচুর সবজি বাগানে হয়। চালের যোগান হয়ে যায়। তেল-মশলার খরচ শিক্ষকরা দেন।
গতকাল, সোমবার গ্রামের বাসিন্দা, অভিভাবক ও পড়ুয়া মিলিয়ে প্রায় ৯০০ জনকে খাওয়ানো হয় স্কুলের সবজি দিয়ে। এদিন মেনুতে ছিল ভাত, পালংশাক দিয়ে ডাল, মিক্সড ভেজ, মুরগির মাংস অথবা পনির এবং রসগোল্লা। তবে এদিন মাংস, পনির বা মিষ্টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেদের পকেট থেকেই দিয়েছেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক। স্কুলের বাগানের সবজি দিয়েই হেঁসেল চলছে। সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া প্রীতি চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘আমাদের স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা খুবই ভালো। পড়াশুনার সঙ্গে মাঠে সবজি চাষ করে নতুন কিছু শিখতে পারি। জৈব সার দিয়ে চাষ করা হয়। কোনও অজৈব সার থাকে না।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জইনুল হক বলেন, ‘‘পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকার সবাই মিলে একত্রিত হয়েই সবজি চাষ করি। আমাদের লক্ষ্য একটাই, স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। স্বাস্থ্য ঠিক রাখলেই পড়ুয়ারা সুরক্ষিত থাকবে। আমরা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলে খাবার খাওয়াই কারণ একটাই, প্রতিদিন যাতে পড়ুয়ারা স্কুলমুখী হয়।’’