দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া এবার হুগলির (Hooghly) চুঁচুড়ায় (Chinsurah)। একটানা দু’দিন ধরে স্বামীর মৃতদেহ আগলে রাখার পর শেষ পর্যন্ত পরিবারের লোকজন বাগানে ফেলে দিলেন মৃতদেহ। মৃতের নাম দিলীপ রক্ষিত(৬৫)। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়ার খরুয়া বাজার সংলগ্ন লোহাপট্টি এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, মৃত দিলীপ রক্ষিত তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে লোহাপট্টিতেই থাকতেন। দিলীপবাবু সেচ দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন। স্থানীয়দের বক্তব্য গত কয়েক বছর ধরে দিলীপবাবুকে তাঁরা বাড়ির বাইরে বেরতে খুব কমই দেখেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রী ও পুত্রের সঙ্গে মৃতের সম্পর্ক ভালো না থাকায় মাঝেমধ্যেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যেতেন।
[আরও পড়ুন: খিদে পেলেই নিখরচায় ‘খুশির ঝুড়ি’, ভবঘুরে, ক্ষুধার্তদের ভরসা বনগাঁর এই দোকান]
এবারও সেইরকমই হয়েছিল। দিন দশেক আগে দিলীপবাবু বাড়ি ফিরে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দিলীপবাবুর বাড়ির বাগানে লেপ জড়ানো অবস্থায় কোনও কিছু পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। কাছে যেতেই দেখা যায় প্রচণ্ড দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। এর পরই এলাকাবাসীর সন্দেহ হয় লেপের ভিতর জড়ানো অবস্থায় কোনও মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে চুঁচুড়া থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। লেপ সরাতেই দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে দিলীপবাবুর মৃতদেহ। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়।
[আরও পড়ুন: করোনা আবহে চন্দননগরের মানুষ ভোট দিতে যাবেন তো? চিন্তায় শাসক-বিরোধী সব শিবির]
অন্যদিকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মৃতের স্ত্রী পদ্মা রক্ষিত জানিয়েছেন, রবিবার তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। তারপর থেকেই মৃতদেহ দু’দিন ধরে বাড়িতেই ছিল। কিন্তু মৃতদেহে পচন শুরু হওয়ায় দুর্গন্ধ বের হতে থাকায় টিকতে না পেরে তাঁরা বাড়ির বাগানে মৃতদেহ ফেলে দিয়েছেন।
পরিবারের এহেন বক্তব্য শুনে স্বাভাবিক ভাবেই রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ স্থানীয়দের। পাশাপাশি দিলীপবাবু মারা যাওয়ার পর কেন কোনও চিকিৎসককে ডাকা হয়নি সেই প্রশ্নের জবাবে মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্ত্রী। স্থানীয়দের দাবি, এই ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজে বার করুক পুলিশ। তবে তাঁরা মনে করেন যেভাবে মৃত্যুর পর একজন মানুষকে বাগানে ফেলে দেওয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে গর্হিত অপরাধ। চুঁচুড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে সুসম্পর্ক ছিল না। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর কেস শুরু করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, মৃতের স্ত্রী মানসিক বিকারগ্রস্ত হতে পারেন।