রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: লন্ডনে খেলা দেখতে যাওয়ার বিপুল খরচ এল কোথা থেকে? সৌমেন্দু অধিকারীর কাছে এই প্রশ্নের জবাব চায় পুলিশ। সে কারণে শুক্রবার তৃতীয়বার তাঁকে জেরা করেন আধিকারিকরা। ফের আগামী সোমবার কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীকে তলব করা হয়। এছাড়া গত ১০ বছরের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন, পাসপোর্টও চাওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রাক্তন পুরপ্রধান পুরসভা থেকে কত টাকা ভাতা, মোবাইল, মিটিং অ্যালাউন্স পেতেন তার হিসাবও চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার তৃতীয়বার কাঁথি থানায় হাজিরা দেন শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু (Soumendu Adhikari)। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কাঁথির একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে স্থানীয় তৃণমূল নেতার বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, যার নেতৃত্বে ছিলেন সৌমেন্দু অধিকারী। তার ফলে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কাঁথি শহরের ক্যানেলপাড়। এই ঘটনার পরে পুলিশ একটি মামলা রুজু করে। সেই মামলার তদন্তে জেরা করার জন্যে অধিকারী পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তানকে নোটিস দিয়েছিল কাঁথি থানার পুলিশ। নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ কাঁথি থানায় হাজিরা দেন সৌমেন্দু। প্রায় ৫ ঘণ্টা জেরার পর বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট নাগাদ থানা থেকে বেরোন। জেরার ফাঁকে সময় কাটানোর জন্যে গীতা নিয়ে যান সৌমেন্দু।দাবি, তদন্তকারীরা তাঁকে গীতা পড়ার অনুমোদন দেননি। তাই তা পড়াও হয়নি।
[আরও পড়ুন: যৌনচক্র চালিয়ে ব্ল্যাকমেলিং, প্রাসাদোপম অট্টালিকার মালকিন অর্চনার ফাঁদে মন্ত্রী-বিধায়কও!]
সূত্রের খবর, ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখতে ২০১৯ সালের জুন মাসে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন সৌমেন্দু অধিকারী। সে সময় তাঁর খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে ১৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু সৌমেন্দু অধিকারী পুরপ্রধান থাকাকালীন ভাতা, মোবাইল ও মিটিং অ্যালাউন্স মিলিয়ে ৬ হাজার টাকা পেতেন। তাহলে কী করে বিনোদনের জন্যে এত টাকা খরচ করলেন? টাকার উৎস কী? এই খরচের হিসাব দিতেই সৌমেন্দুকে ফের নোটিস পাঠিয়েছিল কাঁথি থানা।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বিশ্বকাপ দেখতে ইংল্যান্ডে গিয়ে ১৭ দিন কাটিয়েছিলেন শান্তিকুঞ্জের কনিষ্ঠ উত্তরসূরি। কিন্তু সামান্য ভাতা পেয়েও কী করে ইংল্যান্ডে খেলা দেখতে গেলেন? এই অর্থ জোগানের উৎস খুঁজতে পুলিশ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রাক্তন পুরপ্রধানের সঙ্গে ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখতে ইংল্যান্ডে যাওয়ার সঙ্গী ছিলেন বর্তমান কাঁথি পুরসভা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলেম আলি খান, প্রাক্তন কাউন্সিলর জাভেদ আখতার ও সৌমেন্দু ঘনিষ্ঠ রামচন্দ্র পণ্ডা-সহ কয়েকজন।
কাঁথি থানা থেকে বেরিয়ে সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘আমি ধর্মগ্রন্থ গীতা নিয়ে থানায় যাই। কিন্তু থানায় ঢুকতেই আমার হাত থেকে তা নিয়ে নেওয়া হয়। আমি জানতে চাই, গীতা কবে নিষিদ্ধ হল? এছাড়া আমাকে বারবার নোটিস করা হচ্ছে আমি নাকি রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছিলাম। আমি আমার পাসপোর্ট দেখিয়েছি। ইউকে ভিসা ছাড়া অন্য কোনও স্ট্যাম্প তাতে নেই। যখন রাশিয়ায় খেলা হয় তখন আমার পাসপোর্ট তৈরিই হয়নি। প্রমাণ দেওয়ার পর শুক্রবার আবার রাশিয়া যাওয়ার বিষয় নিয়ে আমাকে নোটিস করেছে। অথচ আমাকে দোলের দিনের একটি ঝামেলা নিয়ে জেরা করা হয়। এফআইআরে নাম না থাকা সত্ত্বেও এক বছর সাত মাস পরে পুলিশের মনে হল ওই মামলায় আমাকে জেরা করতে হবে। সবই দিদিমণি আর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে হচ্ছে।’’