সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভেদাভেদের রাজনীতিতে তিনি ক্লান্ত। মানবতার ঊর্ধ্বে উঠে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিতর্কে তিনি আর জড়াতে চান না। আর তাই আসানসোল-রানিগঞ্জের ঘটনার পর কার্যত বীতশ্রদ্ধ হয়েই রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ভাবছিলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ ও গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি তাঁকে লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে মানা করেন। অভিভাবকসুলভ স্বরে বাবুলকে পরামর্শ দেন, গুজরাট পরবর্তী অধ্যায়ে তাঁকেও হটাতে উঠে পরে লেগেছিল বিরোধীরা। কিন্তু মোদি রাজনীতি ছাড়েননি। বরং ২৪x৭ অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। নয়া ভারত গঠনের স্বপ্ন দেখছেন।
[আসানসোলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল, স্পর্শকাতর এলাকা পরিদর্শন বিজেপির ৪ সাংসদের]
প্রধানমন্ত্রীর কথায় শেষ পর্যন্ত পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন বাবুল সুপ্রিয়। সোমবার টুইটারে এ কথা জানিয়ে বাবুল লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নতুন করে লড়াই শুরু করার তাগিদ পেলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভাজনের রাজনীতি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন। মিথ্যা ও জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে আমার লড়াই জারি থাকবে।’ গত বৃহস্পতিবার উত্তপ্ত আসানসোলে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান এই বিজেপি সাসংদ। তখনই সাংসদ হয়ে কেন তিনি এলাকায় ঢুকতে পারবেন না, এই প্রশ্ন তোলেন বাবুল। যদিও সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পথ আটকান স্থানীয়রাই। বিক্ষুব্ধ জনতা জানতে চান, কেন হিংসার পর বাবুল এসেছেন? এতক্ষণ তিনি কোথায় ছিলেন? চাঁদমারি এলাকায় ঢুকতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বাবুল। জানতে চান, সাংসদ হয়ে কেন তিনি নিজের এলাকায় ঢুকতে পারবেন না? কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এই সময় কোনও নেতারই এলাকায় ঢোকার অনুমতি নেই। বাবুল পালটা প্রশ্ন তোলেন, এলাকায় অনেক তৃণমূল নেতা রয়েছেন কী করে? এই নিয়েই পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো বচসায় জড়িয়ে পড়েন সাংসদ। এরপর পুলিশি নিষেধ অগ্রাহ্য করেই তিনি ঢুকতে গেলে তাঁকে বাধা দেন কলকাতা ডিসি ইস্ট রূপেশ কুমার। সে সময় ওই অফিসারকে বাবুল ধাক্কা দেন বলে অভিযোগ। আইপিএস হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে সাংসদের বিরুদ্ধে।
[এটাই বাংলা, হনুমান জয়ন্তীর ব়্যালিতে জল হাতে এগিয়ে এলেন ফিরোজরা]
আজ বাবুল তাঁর টুইটারে লিখেছেন, ‘ঘটনাস্থলে যাওয়ায় আমাকে হেনস্তা করে তৃণমূল ক্যাডাররা। তারা পুলিশের মতো আচরণ করছিল। আমি জীবনে এত ঘৃণা দেখিনি এ দেশ তথা রাজ্যের দুই গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে। আমার মতো মানুষ যাঁর অন্তত ১০টি অ্যালবাম রয়েছে খোয়াজা মইনউদ্দিন চিশতির উপর, তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবল সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে?’ বস্তুত আসানসোলের ঘটনার পর বাবুলের ‘চামড়া গুটিয়ে নেব’ মন্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা হয় ফেসবুক-টুইটারে। রীতিমতো বেকায়দায় পড়তে হয় তাঁকে। আজ বাবুল সেই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ওই মন্তব্য ২ তৃণমূল ক্যাডারকে উদ্দেশ্য করে করছিলাম। ওরা দুজন চাঁদমারির কাছে কল্যাণপুর হাউজিংয়ের বাসিন্দাদের আমার সঙ্গে কথা বলতে বাধা দিচ্ছিল। সেই মুহূর্তে রেগে গিয়েছিলাম।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভের কথা তাঁকে জানান আসানসোলের বিজেপি সাংসদ। তখনই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে শেষ পর্যন্ত মোদির অনুপ্রেরণায় সিদ্ধান্ত বদল করেন। রামনবমীর মিছিল ঘিরে দিন কয়েক আগে অশান্ত হয়ে ওঠে রানিগঞ্জ। কয়েকজনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, অশান্তি এড়াতে সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ১৪৪ ধারা বহাল থাকছে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত।
[আসানসোলের মানুষকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ রাজ্যপালের]
The post পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত বদল appeared first on Sangbad Pratidin.