সুব্রত বিশ্বাস: বাহানাগা দুর্ঘটনার পরও শিক্ষা নেয়নি রেল। যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রেলমন্ত্রক। ঘটনার পর দক্ষিণ- পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার থেকে শুরু করে খড়গপুরের ডিআরএম-সহ একাধিক উচ্চ পদস্থ আধিকারিককে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। সাত কর্মীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার পরেও ওই রেলে জ্বলজ্বল করছে যাত্রী নিরাপত্তায় উদাসীনতার নানা চিত্র।
হাওড়া-আমতা (বিজি) সেকশনের বড়গাছিয়া স্টেশনের প্যানেল নিয়ন্ত্রণ করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা। আর এটা যার কাজ, সুখে নিদ্রায় যান সেই স্টেশন ম্যানেজার। শিবপ্রসাদ দাস নামের ওই স্টেশন ম্যানেজারের সুখনিদ্রার ছবিও তুলেছেন কর্মীরা। বাহানাগায় দুর্ঘটনার পর টোকেন পোর্টাররা (চতুর্থ শ্রেণির কর্মী) দায়িত্বপূর্ণ এই কাজ করতে অস্বীকার করেন। কারণ, তাঁদের প্যানেলে হাত দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজের দায়িত্ব স্টেশন ম্যানেজারের। কিন্তু যাত্রী নিরাপত্তাকে একেবারে তুড়ি মেরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে দিয়ে এই কাজ করানোটাকে ‘ক্ষমতা’ আয়ত্বে এনে রেখেছেন ওই স্টেশন ম্যানেজার বলে অভিযোগ। সোমবার এই কাজ অস্বীকার করতে চাইলে এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে মারধর করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী জানাজানি করলেও বদলি করে দেওয়ার হুমকি ঘিরে শুরু হয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। অপারেশন আধিকারিকরা এটাকে বিপজ্জনক ও চরম বেআইনি বলে জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় নয়! রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে এবার পিছু হঠলেন শুভেন্দু]
অভিযোগ, স্টেশন মাস্টাররা ঘুমিয়ে থাকলে বা বিশ্রাম নিলে দায়িত্বপূর্ণ ওই চেয়ারে বসেন অপ্রশিক্ষিত চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাই। অবলীলায় যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন পরিচালনার নির্দেশ দেন। সিগন্যালের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল নিয়ন্ত্রণ করে এরাই। হাওড়া-আমতা শাখায় আপ ও ডাউনে এগারোটি করে বাইশটি ট্রেন চলে। কম ট্রেন চলায় ভিড় প্রচুর হয় ওই শাখায়। এছাড়া রয়েছে মালগাড়ি চলাচল। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর আটটি প্রহরা লেভেল ক্রসিং গেটও রয়েছে। ট্রেন চলাচলের সময় গেটগুলি বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্যানেল থেকে প্রাইভেট নম্বর বিনিময় করে গেট বন্ধ সুনিশ্চিত করা হয়।
রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং বন্ধ না করে লাইন ক্লিয়ার দেওয়ায় অতীতে এখানকার পাতিহাঁল ও মুন্সিহাট রেল গেটে বেশ কয়েকটি দূর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে। চলতি বছরে ২৩ ফেব্রুয়ারি এই সেকশনের মহেন্দ্রলাল নগর স্টেশনের কাছে একটি লোকাল ট্রেনের তিনটি কামরা লাইনচ্যুত হলেও হুঁশ ফেরেনি স্টেশন কর্তৃপক্ষের। কর্মীদের অভিযোগ, সেকশনাল ট্রাফিক ইন্সপেক্টরদের এ ঘটনা জানানো সত্ত্বেও কোনওরকম উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি।
