অংশুপ্রতীম পাল, খড়গপুর: পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Bengal Panchayat Election) আগে নিহত সবংয়ের বিজেপি বুথ সভাপতি মা ও স্ত্রীর বয়ানে বিতর্ক। মৃতের মায়ের অভিযোগ, আত্মহত্যা করেছেন তাঁর ছেলে। স্ত্রীর দাবি, খুন করা হয়েছে বিজেপি নেতাকে। মা ও স্ত্রীর পৃথক বয়ান ঘিরে তুঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির তরজা।
বৃহস্পতিবার সকালে নিজের বাড়ি থেকে সবং থানার বলপাই গ্ৰাম পঞ্চায়েতের পানিথর বুথের বিজেপি সভাপতি দীপক সামন্তের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের স্ত্রী বৈশালী সামন্তের অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের কয়েকজন এই কাজ করেছে বলেও অভিযোগ। এই মর্মে তিনি সবং থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগ দায়েরের সময় মৃতের স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য নেত্রী ভারতী ঘোষ, বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তন্ময় দাস, সহ সভাপতি অমূল্য মাইতি-সহ আরও অনেকে।
বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি অমূল্য মাইতি বলেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে দীপক সামন্তের উপর তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা অত্যাচার শুরু করে। তাঁকে একঘরে করে রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তৃণমূলের কয়েকজন দীপক সামন্তকে খুন করে ঘরের ভিতর ঝুলিয়ে দেয়।”
[আরও পড়ুন: ২৮ কুড়মি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নয়, রক্ষাকবচ দিলেন বিচারপতি মান্থা]
অপরদিকে মৃতের মা উষারানি সামন্ত জানান, তাঁর ছেলে আত্মহত্যা করেছেন। আর এই আত্মহত্যার কারণ হিসাবে সম্পত্তি নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটিকেই দায়ী করেন তিনি। তাঁর ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি। এদিকে, মৃতের ভাইপো অতনু সামন্ত জানান, তাঁদের দাদুর গত ২৫ জুন মৃত্যু হয়েছে। ঠাকুমার সঙ্গে কাকা একসঙ্গে সেই কাজ করছিলেন। তারপর ঠাকুমা স্নান করতে চলে যান। আর তাঁর মা সুষমা সামন্ত দুপুরের খাবার তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখনই কাকা একবার বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর বাড়িতে ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে পড়েন। বেশ খানিকক্ষণ পার হয়ে যাওয়ার পরেও কাকা না বেরোনোয় তিনি দু’টি ঘরের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারেন। তখনই তাঁর নজরে পড়ে কাকার ঝুলন্ত দেহ। তারপর সকলকে ডাকাডাকি করা হয়। যদিও মৃতের মা ও ভাইপোর এই বক্তব্য মানতে নারাজ বিজেপি নেতারা।
গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, পুলিশ জোর করে ঘটনার মোড় ঘোরানোর জন্য মৃতের শোকাতুর মাকে দিয়ে এই অভিযোগ দায়ের করিয়েছে। যদিও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়গপুর) রানা মুখোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন নিহত বিজেপি নেতার মাকে চাপ দেওয়া হয়নি। এটি আত্মহত্যা। আর মৃতের মা নিজেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় তৃণমূলের সবং ব্লকের সভাপতি আবু কালাম বক্স বলেন, “বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। সবংয়ে সর্বত্র প্রার্থী দেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবংয়ে গ্ৰাম পঞ্চায়েত স্তরে মোট ২৪৯টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৭২টিতে প্রার্থী দিতে পেরেছে। এই ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে এধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।”