সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নারী অবলা। তাই যে কোনও অত্যাচারের মুখে পড়েও মুখ বুজে তারা মেনে নেবে সবকিছু। সে পরিস্থিতি বদলেছে। নারীর ক্ষমতায়নের নানা নমুনা সামনে এসেছে। ফেমিনিজম নিয়ে চর্চারও অভাব নেই। তা সদর্থকও বটে। তবু মুদ্রার অন্য পিঠটাও কম ভয়ঙ্কর নয়। আজও রাজ্যে রাজ্যে নারী নিগ্রহের অহরহ ঘটনা আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। অবস্থা এমনই যে ঘরের মেয়েকে বাইরে পাঠিয়ে ভয়ে বুক দুরুদুরু মা-বাবার। স্বস্তি বা শান্তি কোনওটাই নেই। এই বিপ্রতীপ অবস্থাতেই সাহস জোগাচ্ছে প্রিয়াঙ্কা সিংহ রায়। শ্লীলতাহানি করতে আসা যুবকদের যেভাবে পাঞ্চ-কিকে কুপোকাত করেছে এই সাহসিনী, তাতে যেন অনেকটাই আশার আলো দেখছেন রাজ্যের সব মেয়েরাই।
[ ইচ্ছাশক্তির জোরে প্রতিবন্ধকতাকে জয়, মায়ের কোলে চেপেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পড়ুয়া ]
সাঁইথিয়ার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা। গত সোমবার বিকেলে বোনকে নিয়ে সাইকেল চড়ে একটু বেড়াতে বেরিয়েছিল। দুই অল্পবয়েসি মেয়েকে দেখেই প্ল্যান ছকে ফেলে তিন যুবক। এগিয়ে যায় প্রিয়াঙ্কার দিকে। কটূক্তি শুরু হয়। প্রতিবাদ করতেই পালটা হুমকি। আলাদা করে দেখা করার ডাক আসে। তিন যুবকের এরকম কথা শুনে অন্য অনেকেই হয়তো পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা যে অন্য ধাতুতে গড়া। সে যে তাইকোন্ডো-র ব্ল্যাক বেল্ট যুবকদের তা জানার কথা নয়। বীরভূম জেলা পুলিশের আয়োজিত প্রতিযোগিতাতে সোনার মেডেলও পেয়েছে সে। সুতরাং তিন যুবকের হুমকিতে ঘাবড়ে যাওয়ার পাত্রী সে নয়। উলটে চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ করে। বোনের হাতে সাইকেল দিয়ে এগিয়ে যায় যুবকদের দিকে। শিকার হাতের মুঠোয় দেখে যুবকদের চোখে যখন উল্লাস, তখনই ছোট্ট হাতের কঠিন পাঞ্চ সজোরে এসে পড়ে যুবকদের নাকের ঠিক তলায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একের পর এক কিক। মিনিট কয়েকের খেল। তাতেই ধুলোয় গড়াগড়ি ‘বীরপুরুষ’দের। ততক্ষণে লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছে। গণধোলাইয়ে হয়তো প্রাণটাই হারাত। প্রিয়াঙ্কার মায়ের উদ্যোগেই তিন যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
[ ট্রাই সাইকেলে বসেই প্রতিবন্ধীদের জীবনযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করছেন প্রিয় ‘রবীনদা’ ]
সাঁইথিয়ার সোনার মেয়েকে নিয়ে গর্ব শুধু বীরভূমের নয়, গোটা রাজ্যেরই। সারা রাজ্যের মেয়েদের কাছে যেন রাতারাতি মডেল হয়ে উঠেছে প্রিয়াঙ্কা। নাহ, কোনও নায়িকা নন, কল্পনার কোনও চরিত্রও নয়, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রিয়াঙ্কার প্রতিবাদই সকলকে জানিয়ে দিয়েছে, মেয়েরা আজও আত্মরক্ষা করতে জানে। দেবী দুর্গার দেশ এ ভূমি। তা নিয়ে রাজনীতি হতে পারে, শৌখিন চর্চা হতে পারে, কিন্তু কাজের কাজ অনেক সময়ই হয় না। বরং পুজোর ছলে ভুলে থাকার মতোই দেবীপিঠেই নিয়ত লাঞ্ছিত হতে থাকেন নারীরা। বহু আলোচনা, সোশ্যাল মিডিয়ার সিন্থেটিক প্রতিবাদেও অবস্থা বদলায় না। অথচ আসল শক্তি যে আছে ওই পাঞ্চেই, তা তো প্রিয়াঙ্কা বুঝিয়েই দিয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের মূলকথা ওই অকুতোভয় চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদেই। তা যেন নতুন করে বুঝিয়ে দিতে পেরেছে প্রিয়াঙ্কা। বাবা পুরসভার কর্মী। ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে তাইকোন্ডোর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রায় বছর ছয়েক ধরে মার্সাল আর্টে শিক্ষা। এতেই আত্মবিশ্বাসী প্রিয়াঙ্কা। তাই কোনওরকম ভয়ে কাবু না হয়ে উলটে যুবকদের শায়েস্তা করতে পেরেছে সে।
[ অসুস্থ সদ্যোজাতকে পাশে নিয়েই রাত জেগে পরীক্ষার প্রস্তুতি গৃহবধূর ]
এই নমুনাকেই তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্যাপক চর্চা। অনেকেই বলছেন নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের একটা দিক যদি শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হয় তবে অন্যদিক অবশ্যই এই আত্মরক্ষার ক্ষমতা অর্জন। সেলাই নয়, প্রয়োজনে হাতের শক্তিতে যে পুরুষের বিকৃতিকেও ঘায়েল করতে পারে নারীরা, প্রিয়াঙ্কা সে কথা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ওই যুবকদের। অভিভাবকদের মত, স্কুল-কলেজে ছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হোক মার্শাল আর্ট। যাতে প্রিয়াঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পড়ে জন্ম হয় আরও অনেক প্রিয়াঙ্কার। যাতে অসহায় অবস্থার বলি না হতে হয় মেয়েদের। প্রিয়াঙ্কাকে কুর্নিশ জানানো আসলে সেই ভরসার জায়গাটিকে খুঁজে পেয়েই। পারলে মেয়েরাই পারে, একাই পারে-বহু তত্ত্ব, চর্চা পেরিয়ে প্রিয়াঙ্কার কয়েকটি পাঞ্চই যেন সে কথা সবথেকে সার্থকভাবে বলে উঠেছে। নারী দুর্বল নয়, এ কথা আগেও বহুবার বলা হয়েছে। আবার বিভিন্ন ঘটনায় সে দুর্বলতাই প্রকট হয়েছে। প্রিয়াঙ্কার পাঞ্চ যেন নতুন করে ভরসা দিচ্ছে। জোর দিয়ে তাই অনেকেই আবার মুখ ফুটে বলতে পারছেন, কে বলে নারী অবলা!
The post কে বলে নারী অবলা! প্রিয়াঙ্কার পাঞ্চই ভরসা জোগাচ্ছে রাজ্যের মেয়েদের appeared first on Sangbad Pratidin.
