দীপঙ্কর মণ্ডল: জীবনানন্দ বলেছিলেন, জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার/ তখন হঠাৎ যদি দেখা হয় তোমার আমার। কুড়ি নয়, ভারতী ঘোষের সঙ্গে দেখা হল পাঁচ বছর পরে। সেদিনও ছিল এমনই এক দুপুর। অসহ্য গরম। লোকসভা ভোটের বাজার। খবর ছিল, নেতাই গণহত্যায় অভিযুক্ত ৫ জনকে হায়দরাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীর নেতৃত্বে সিআইডির একটি দল। প্রার্থীদের পিছনে না ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলাম মেদিনীপুর আদালত চত্বরে। আজ যেমন ভারতীর গাড়ি ঠিক আমার সামনে এসে দাঁড়ালো, সেদিনও আদালত চত্বরে তাই হয়েছিল। মানুষটা এক। কিন্তু গাড়ি এবং পোশাক আলাদা। সানগ্লাস চোখে আইপিএস লেখা উর্দি ছিল। এখন গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে লেখা ভিভিআইপি, ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী।
মেচোগ্রাম-ঘাটাল রোডের টালিভাটা। রোদের প্রবল তাপ। পশ্চিম মেদিনীপুর যেন নিজেকে পুড়িয়ে ফেলার ছক করছে। বেশ কিছুটা দূরে বিজেপি নেতা কর্মীরা অপেক্ষায়। রোড শো হবে। সাদা এসইউভির সামনের আসনে ভারতী। আমার পিঠে ভারী ব্যাগ। রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে। বিনীত ইশারায় গাড়ি থামাতে বললাম। নেমে এলেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার।
[ আরও পড়ুন: মদনের প্রচারে উঠল ‘গো ব্যাক’ স্লোগান, উত্তেজনা কাঁকিনাড়া বাজারে]
কেমন আছেন, চলুন হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি বলেই সেই পুরনো স্টাইলে পা চালালেন ভারতী। রাস্তার দু’দিকে তখনও প্রচুর সবজির দোকান। মাছের দোকান। কেউ বসে মুড়ি-চপ-ঘুগনি খাচ্ছেন। প্রত্যেকটা দোকানের সামনে দাঁড়ালেন এই জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার। সবাই তাঁঁকে আগে থেকে চেনেন। কেউ নমস্কার করলেন। কেউ এসে হাত মেলালেন। এমনকি সেলফিও তুললেন কেউ কেউ। নির্বাচনী জনসংযোগের মাঝে বললেন, “আমি রাষ্ট্রপুঞ্জের হয়ে বিভিন্ন দেশে গিয়েছি। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু এই জেলার মতো এত সহজ সরল মানুষ কোথাও দেখিনি। সবাই আমাকে চেনেন। ভালবাসেন। এটাই আমার ভরসা।”
প্রাক্তন এই আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা রুজু হয়েছে। বেশিরভাগ এফআইআরের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ভারতীর কথায়, ‘‘আমাকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে।’’ ঘাটাল কেন্দ্রে এবার কোনও নির্দল প্রার্থী নেই। বিএসপি, কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিআই, শিবসেনা, বিজেপি ও এসইউসি মনোনয়ন জমা দিয়েছে। ১২ মে ভোট। প্রার্থী সংখ্যা ৭। মূল লড়াই বিজেপি ও তৃণমূলের। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব)- এর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমর বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের। প্রধান প্রতিপক্ষের কথা তুললাম। “দু’বছর আগে এখানে যে বন্যা হয়েছিল সাংসদ তখন কিন্তু জলে পা দেননি। আমি উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়ে ছিলাম। আপনাদের আর্কাইভে নিশ্চয়ই পুরনো ছবি আছে। মানুষ সেসব মনে রেখেছেন”, সটান জবাব ভারতীর।
[ আরও পড়ুন: রমজান নিয়ে ‘রাজনীতি’! নেটদুনিয়ায় কটাক্ষের শিকার মিমি]
এক বয়স্ক মহিলা সবজি বিক্রেতা ভারতীর মাথায় হাত রেখে বললেন, “আমাদের বড্ড কষ্ট। কেউ পাশে থাকে না। তুমি থেকো। এমপি হয়ে বদমাশগুলোকে টাইট করো।” ভালোবেসে এক গোছা সজনে ডাঁটাও তুলে দিলেন আগের পুলিশ সুপারের হাতে। রবীন্দ্র জয়ন্তীর আবহে ভারতী বিড়বিড় করে বললেন,জয় লোভে যশো লোভে, রাজ্য লোভে অয়ি/ বীরের সদগতি হতে ভ্রষ্ট নাহি হই।
The post প্রচারে ঘাটালের বন্যাই হাতিয়ার ভারতীর, নিশানায় প্রতিপক্ষ দেব appeared first on Sangbad Pratidin.
