সুমন করাতি, হুগলি: চারদিকে আলোর মালা। গির্জাগুলিতে নানা রঙের ছটা। সাজসজ্জা দেখে একঝলকে পার্ক স্ট্রিট বলে ভুল হতেও পারে। কিন্তু একটু ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায়, জায়গাটি আসলে পার্কস্ট্রিটের চেয়েও ঢের প্রাচীন - শ্রীরামপুর, যা আদতে ছিল পর্তুগিজদের উপনিবেশ। হুগলি নদীর তীরবর্তী এই জনপদ এখনও বয়ে নিয়ে চলেছে সেই ঐতিহ্য। ক্রিসমাসে এখানকার গির্জাগুলোও সেজে ওঠে দারুণভাবে। তবে এবছর সেখানে ক্রিসমাস আরও জমজমাট। পার্ক স্ট্রিটের আদলে এখন থেকেই সেজে উঠছে শ্রীরামপুরের গির্জাগুলো। দীর্ঘ এলাকাজুড়ে আলোকসজ্জা। তুঙ্গে তার প্রস্তুতি।
শ্রীরামপুরের সেন্ট ওলাফ চার্চে আলোকসজ্জা। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের মতো এবছর শ্রীরামপুরেও ক্রিসমাস কার্নিভালের উদ্যোগ নিয়েছে পুরসভা। শ্রীরামপুর শহরের ৪০০ বছরের ইতিহাসকে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে বড়দিনের উৎসব বা কার্নিভাল পালন করা হবে। এখানকার ড্যানিশ টার্ভান, সেন্ট ওলাফ চার্চ, চেসায়ার্স হোম চার্চ ছাড়াও এশিয়ার প্রাচীনতম শিক্ষাকেন্দ্র শ্রীরামপুর কলেজ, ড্যানিশ গভর্নর বিল্ডিংকে সামনে রেখে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা এবং চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল পাপ্পু সিং জানালেন, দিনেমারদের প্রাচীন শহর ফ্রেডরিক নগর বা শ্রীরামপুরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক স্থাপত্য। এর মধ্যে সেন্ট ওলাফ চার্চকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রতি বছর ক্রিসমাসের সময় গঙ্গার ধারের এই জনপদে প্রচুর জনসমাগম হয়। বড়দিনের উৎসবে মেতে ওঠেন তাঁরা। সেকথা মাথায় রেখে পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবছর ২২ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত শ্রীরামপুরের গঙ্গার ধার থেকে নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউর মানসী সিনেমা হল পর্যন্ত রাস্তা আলোক মালায় সজ্জিত করা হবে, যার যার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। শ্রীরামপুরের অনেকটা অংশ রঙিন আলোকমালায় সেজে উঠেছে। শুধুমাত্র আলোকসজ্জা নয়, বড়দিনের এই উৎসবের থাকছে নানাবিধ চমক। রাস্তার দুধারে নানা ধরনের স্টল, খাবারের দোকান-সহ অন্যান্য মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা থাকবে।
পথঘাট সেজে উঠেছে আলোকমালায়। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিবছর পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে যে বড়দিন উৎসবের সূচনা হয় সেভাবেই এবছর শ্রীরামপুরে ক্রিসমাস পালন করা হবে। পুরপ্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, ''শ্রীরামপুর শহরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম, ভারতের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার জনক উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্সমান এবং জেমস ওয়ার্ড - শ্রীরামপুরের এই ত্রয়ী ভারতবর্ষের শিক্ষার নবজাগরণ ঘটিয়েছিলেন, এশিয়ার প্রথম মহাবিদ্যালয় শ্রীরামপুর কলেজ তাঁরা স্থাপিত করেছিলেন। এই শহর থেকেই প্রথম বাংলার হরফ তৈরি হয়, ছাপাখানা তৈরি হয়, এই শহর থেকেই সমাচার দর্পণ এবং দিকদর্শন নামে দুটি বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ হয়, যা এককথা বলা যায়, ভারতের সংবাদপত্র জগতের আঁতুড়ঘর হল আমাদের শ্রীরামপুর, সেই শহরেই এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ক্রিসমাস কার্নিভাল, যার জন্য শ্রীরামপুরবাসী হিসেবে আমরা সবাই গর্বিত।''