রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় চলছে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন। রবিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। দুপুর ২টো পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তারপরই শুরু হবে গণনা। নির্বাচন ঘিরে তুঙ্গে রয়েছে উত্তেজনা। একদিকে শাসক তৃণমূল, অন্যদিকে বিরোধী বিজেপি। কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচন শেষে জয়ের হাসি কারা হাসবে, সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।
এতদিন কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ক্ষমতায় ছিলেন শুভেন্দু অনুগামীরাই। এবার কি সেখানে থাবা বসাবেন অখিল গিরি? সেই লক্ষ্যেই ঘুঁটি সাজিয়েছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন দেখভাল করার জন্য। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল নেতা আশিস চক্রবর্তীকে ভোটের ময়দানে নামানো হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁরা। গত মঙ্গলবার কোলাঘাটে পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সাংগঠনিক জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির রাশ নিজেদের হাতে রাখার জন্য একাধিক ভোট কৌশল নেওয়ার কথা আলোচনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাসক না বিরোধী কার কৌশল কাজে লাগে, তা-ই দেখার।
প্রসঙ্গত, পূর্ব ভারতের অন্যতম বড় সমবায় ব্যাঙ্ক হল এটি। এই ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটি হাতে রাখা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে টানাপোড়েন চলে আসছে। ভোট প্রক্রিয়া নিয়েও তুমুল আইনি লড়াই হয়েছে। সেই লড়াই গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ১৫ ডিসেম্বর, রবিবার কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে ১০৮টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটাভুটি। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে মোট আসন সংখ্যা ১০৮টি। যেখানে তৃণমূল, বিজেপি ও অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থনে মোট ৩৮১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার ৮০ হাজার ৪৮০ জন। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বাংলায় এর আগে কোনও সমবায় সমিতির নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যেই স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে সুর চড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আধা সামরিক বাহিনীর ঘেরাটোপে নির্বাচন করার। যে কেন্দ্রগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার নির্দেশ সেগুলি হল, কাঁথি ১,২,৩,৪ এবং এগরা-৮। প্রতি কেন্দ্রে ১৫জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ৫০জন করে রাজ্য পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে এই জেলার দুটি আসনেই হারতে হয়েছে তৃণমূলকে। দীর্ঘদিন ধরে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক। যদিও শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পরে পরিচালন কমিটির অন্যান্য সদস্য তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে শুভেন্দুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়। তাই এবার পরিচালন ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে মরিয়া তৃণমূল। আবার ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপিও।