রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: আর মাত্র কয়েকঘণ্টার অপেক্ষা! একটি বছরের শেষ, আরও একটি বছরের শুরু। তার আগে বর্ষবরণের রাতে আলোর মালায় সেজে উঠল দিঘা। একদিকে মায়াবি আলো, অন্যদিকে আধ্যাত্মিকতায় এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটেছে সেখানে। বছরের শেষদিনে নতুন পোশাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীকে। শুধু তাই নয়, দর্শনার্থীদের জন্যে গভীর রাত পর্যন্ত দিঘার মন্দির খোলা রাখার সিদ্ধান্ত। ফলে পর্যটকদের অনেকই বর্ষশেষের রাতে ভিড় জমাচ্ছেন জগন্নাথদর্শনে। শুধু আজ নয়, বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১লা জানুয়ারিতেও নতুন পোশাকে সাজিয়ে তোলা হবে জগন্নাথদেবকে, দেওয়া হবে রাজভোগও।
অন্যদিকে ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত রঙিন আলোর ঝলকানি ও সঙ্গীতের মূর্ছনায় রাজপথ দখল করেছেন পর্যটকেরা। সেইসঙ্গে হোটেল হোটেলে চলছে ককটেল-মকটেল পার্টি। বড়দিন থেকেই সৈকত শহরে ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। বছরের শেষদিন যেন শেষ কয়েক বছরের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে এবার পর্যটকের ঢল। তবে এবার ওল্ড দিঘার থেকে নিউ দিঘাতেই পর্যটকের ভিড় বেশি। হোটেল ব্যবসায়ীদের দাবী, প্রশাসনের পক্ষ ওয়ানওয়ে করে দেওয়ার কারণে পর্যটকেরা নিউ দিঘাতে বেশি ভিড় জমিয়েছেন। ফলে ওল্ড দিঘার ব্যবসায়ীরা হতাশ।
অন্যদিকে বর্ষবরণের রাতে এবং ইংরেজি নববর্ষের ভিড়ে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিঘার পাশাপাশি মন্দারমণি, তাজপুর ও শংকরপুর পর্যটন কেন্দ্রে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পর্যটকদের সুরক্ষার কথা ভেবে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (৭০৪৭৯৮৯৮০০) চালু করা হয়েছে জেলা পুলিশের তরফে।কোনও পর্যটক বেড়াতে এসে কোনও সমস্যা কিংবা কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হলে সেখানে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। দিঘার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যেমন হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর সম্বলিত পোস্টার সাঁটানো হয়েছে, তেমনি পুলিশের পক্ষ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের লিফলেট দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দিঘার ভিড়ের সমীকরণ একটু আলাদা। কারণ আগে ছিল শুধুমাত্র সমুদ্র স্নান। এবার প্রথম যোগ হয়েছে জগন্নাথদেব দর্শন। মূলত দিঘায় ভিড় বাড়ার পেছনে জগন্নাথ মন্দিরের আকর্ষণ অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন হোটেল মালিক থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নতুন বছরে দিঘায় সূর্যোদয়ের সাক্ষী হতে চান অনেকেই। আবার অনেকে জগন্নাথদেবকে পুজো দিয়ে নতুন বছর শুরু করতে চান। তাই পর্যটকের ঢল ব্যাপক আকার নিয়েছে।
দিঘা-শংকরপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, বর্ষবরণের জন্যে নিউ দিঘায় ব্যাপক ভিড় জমেছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে ওয়ানওয়ে করে দেওয়ায় ওল্ড দিঘায় সেই তুলনায় ভিড় নেই। তাই কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। তবে জগন্নাথ মন্দিরের কারণে ভিড় আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
