রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: একরাতের বৃষ্টিতেই বন্যা পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে। জলের তোড়ে ভেঙেছে রাস্তা, সেতু, বাড়িঘর। বিপজ্জনকভাবে জলমগ্ন ডুয়ার্সের বহু এলাকা। উত্তরের বনাঞ্চলগুলির দশাও ঝুঁকিপূর্ণ। রবিবার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে জলে ভেসে বহু দূর চলে গিয়েছিল একটি একশৃঙ্গ গণ্ডার। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল বন্যপ্রাণপ্রেমীদের। উদ্ধার হয়েছিল একটি হরিণের মৃতদেহ। এই পরিস্থিতিতে বিপদ এড়াতে সঙ্গে সঙ্গে জলদাপাড়া অভয়ারণ্য বন্ধ করে দেওয়া হয় পর্যটকদের জন্য। দুর্যোগ কাটিয়ে আবার কবে তা খুলবে? তা জানতে অধীর অপেক্ষায় পর্যটকদল। কিন্তু তাঁদের জন্য কোনও সুখবর শোনাতে পারেননি বনকর্তারা। মঙ্গলবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর ডিএফও স্পষ্ট জানিয়েছেন, এখনই পর্যটকদের জন্য জঙ্গল খুলে দেওয়া সম্ভব নয়।
বন্যার জলে ভেসে যাচ্ছে গণ্ডার। ফাইল ছবি
জলদাপাড়ার বিস্তীর্ণ জঙ্গল আপাতত বিপন্মুক্ত। জল জমে নেই। একটি হরিণ ছাড়া বন্যপ্রাণীদের প্রাণহানির খবরও নেই। কিন্তু সামগ্রিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। এখনও জঙ্গলের ভিতরের কোর এলাকায় প্রবেশ করা যায়নি। কারণ, জঙ্গলপথে যাতায়াতের জন্য মূলত কাঠের সেতু থাকে। বৃষ্টির জলে হলং সেতু-সহ একাধিক কাঠের ব্রিজ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাই আরও কোনও বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়ছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয় জলদাপাড়া কর্তৃপক্ষ।
কীভাবে দুর্যোগ সামলে ঘুরে দাঁড়াবে, কীভাবে ফের অরণ্যের সুরক্ষা ফিরিয়ে আনা যাবে, সেসব নিয়ে মঙ্গলবার সকালে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের পর জলপাড়ার ডিএফও প্রবীণ কাসওয়ান জানিয়েছেন, ''আমরা সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা করেছি। পুনর্গঠনের কাজ কীভাবে হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনই পর্যটন চালুর কোনও সম্ভাবনা নেই।''
জলমগ্ন জলদাপাড়ায় হাতির পিঠে পর্যটকদের উদ্ধার। ফাইল ছবি
আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা রাজ্য বন ও পর্যটন কমিটির সদস্য সুমন কাঞ্জিলাল জানিয়েছেন, ''বিপদ একটা হয়েছে। সেই বিপদ কাটিয়ে কীভাবে আবার সব স্বাভাবিক করা যায়, তার জন্য বনদপ্তর ও জলদাপাড়া কর্তৃপক্ষ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করছে। আশা করি, দ্রুত সমাধান করা যাবে। এই অবস্থায় আমরা সকলে দুর্গতদের পাশে আছি।'' ইতিমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আলিপুরদুয়ার জেলার যে কোনও অঞ্চলে আটকে পড়া পর্যটকদের সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে হেল্পলাইন নম্বর চালু হয়েছে।
