সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ পর, জিটিএ-র অধীন সব স্কুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বনধের ডাক। বৃহস্পতিবার থেকে বনধের ডাক দিয়েছে পাহাড়ের 'সংযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ খারকা জানান, স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চললে অথবা ফলাফল ঘোষণার দিন থাকলেও তা স্থগিত থাকবে। জিটিএ প্রধান অনীত থাপা বলেন, "আমি কাউকে হতাশ হতে দেব না। ওই শিক্ষকদের ন্যায়বিচারের জন্য যেখানে যেতে হবে যাব।"
বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ের খবর পাহাড়ে পৌঁছতেই তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মহলে। দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে জিটিএ-র অধীন প্রতিটি সরকারি স্কুলে অনির্দিষ্টকালের বনধের ডাক দেয় সংযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠন।
সংগঠনের দাবি, এই ২৫ বছর ধরে ওই শিক্ষকরা দার্জিলিং পাহাড়ের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করছেন। ২০০২ সাল থেকে পাহাড়ে স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এটা শিক্ষকদের দোষ নয়। প্রশাসনিক ব্যবস্থার ত্রুটি। এজন্য তৎকালীন সরকার, জিটিএ দায়ী। তাই শিক্ষকদের শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ খাড়কা বলেন, "দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের জিটিএ-র অধীন সমস্ত স্কুল বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। যেসব স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে, ফলাফল ঘোষণা হতে চলেছে সেটাও স্থগিত থাকবে। কোনও স্কুল সংগঠনের আহ্বান উপেক্ষা করলে যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে সংগঠন তার দায় নেবে না।" তিনি আরও জানান, কলকাতা হাই কোর্টের রায় এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যা দার্জিলিং পাহাড়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পাশাপাশি অন্য শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। এটা চলতে পারে না। তাই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, জিটিএ-র নিয়ন্ত্রণে পাহাড়ে ৩৬০টি মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে রাজ্য সরকার জিটিএকে শিক্ষক নিয়োগের নির্দেশ দেয়। জিটিএ জুন মাসে ৩১৩ জন শিক্ষক নিয়োগ করে। এরপর বেআইনিভাবে নিয়োগের অভিযোগ তুলে কলকাতার বাসিন্দা জসুমুদ্দিন মণ্ডল হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। এছাড়াও অভিযোগ দায়ের হয়েছিল বিনয় তামাং ও তৃণমূল যুব নেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেও।
অভিযোগে বলা হয়, জিটিএ-র অধীনস্থ স্কুলগুলোতে বেআইনিভাবে নিয়োগ হয়েছে। প্রথমে মামলাটি ওঠে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গল বেঞ্চে। তখন মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। রাজ্য ওই রায়ের বিরোধিতা করে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। ডিভিশন বেঞ্চও বিচারপতি বসুর রায় বহাল রাখে। এরপর রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। শীর্ষ আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে, মামলাটি হাই কোর্টে ফেরত পাঠায়। ফের মামলাটি বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসেই ওঠে।
বুধবার দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের জিটিএ-র অধীন সরকারি স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায়ে ৩১৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। বিচারপতি বলেন, "ওই শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করা উচিত। যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, তাদের ভার রাজ্য কেন বহন করবে? এদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?" তারপর ৩১৩ জনের চাকরি বাতিলের রায় দেন তিনি। চাকরি বাতিলরে সঙ্গে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
