শুভময় মণ্ডল: ‘দাদা, আর্জেন্টিনা চায়ের দোকান কোনদিক?’ ইছাপুরের নবাবগঞ্জে গেলে একথা যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে সেই বিখ্যাত চায়ের দোকান।
আর্জেন্টিনা চায়ের দোকান নাম কেন তা সেখানে গেলেই বুঝতে পারবেন। গঙ্গার ধারে তিনতলা বাড়ি আর তার নিচে চায়ের দোকান। গোটা বাড়ি নীল-সাদা। আর্জেন্টিনার জার্সির রঙে রাঙানো সেই বাড়িতেই থাকেন শিবশংকর পাত্র। ৫৩ বছরের এই প্রৌঢ় পেশায় চা-বিক্রেতা। কিন্তু তাঁর ধ্যান-জ্ঞান বলতে শুধুই আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে মারাদোনার আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় আর সেই থেকেই পাগলভক্ত এলাকার শিবে দা। চা-বিক্রি করেই চলে সংসার। কিন্তু তাঁর আর্জেন্টিনা প্রীতি গোটা উত্তর ২৪ পরগনায় সুবিদিত। ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনার প্রেমেই আর্জেন্টিনা ভক্ত হয়ে ওঠা। তারপর এখন মেসিভক্ত। বিশ্বকাপ বা কোপা আমেরিকা এলেই গায়ে চাপে সেই নীল-সাদা জার্সি। মেসির ১০ নম্বর জার্সিই যেন তখন তাঁর পরিচয়। ম্যাচের সময় দোকানের সামনে টিভিতে চলে খেলা। আর সেই সঙ্গে গ্রাহকদের সুস্বাদু চা করে খাওয়ান শিবে দা।
তিনি বলেন, মেসি যেন মারাদোনারই প্রতিচ্ছবি। তাঁর পরিবারে সবারই প্রিয় মেসি। আর তিনি মেসিকে ছেলের মতো ভালবাসেন। প্রত্যেক বছর ২৪ জুন দিনটা এলেই নীল-সাদায় সেজে ওঠে গোটা পাড়া। ঘটা করে পালিত হয় জন্মদিন। কেক কাটা, পাড়ায় ফুটবল টুর্নামেন্ট করা, গান-বাজনা, গরিব-দুঃস্থদের খাওয়ানো ও বস্ত্র-বিতরণ, এসবই করেন শিবশংকর। আর আর্জেন্টিনা খারাপ খেললে মন ভার হয়ে যায় তাঁর। সেদিন যেন তাঁর দোকানে অঘোষিত অশৌচের পরিবেশ বিরাজ করে। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিলেন তিনি। সপরিবারে যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকাও জমিয়েছিলেন। কিন্তু রাশিয়া যাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট নয়। কিন্তু দমেননি শিবে দা। ঠিক করেছেন দোকানের টিভিতে খেলা দেখেই প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটাবেন।
মেসির এটাই সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ। তাই প্রিয় ফুটবলারের বিশ্বজয়ের আশায় দিনরাত প্রার্থণা করে চলেছেন তিনি। জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া টুকু মেসির হাতে কাপ দেখলেই পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন শিবে দা।
The post মেসিই ধ্যান-জ্ঞান চা বিক্রেতার, ইছাপুরে ‘আর্জেন্টিনা’ চায়ের দোকান appeared first on Sangbad Pratidin.
