রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: বড়দিনের আগে বিপাকে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যস্থিত হোম স্টে, হোটেল মালিকরা! ওই অঞ্চলের সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বনদপ্তর। বৃহস্পতিবার থেকে এই মর্মে নোটিস জারি করেছে দপ্তর। এরপরই বক্সাজুড়ে রোজগার হারানোর আশঙ্কায় কয়েক হাজার মানুষ।
কেন এমন নির্দেশ? ২০২২ সালের ৫ মে গ্রিন ট্রাইবুনাল (ইস্টার্ন জোন, কলকাতা) পরিবেশপ্রেমী সুভাষ দত্তের করা মামলায় বক্সাতে সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ব্যবসায়ীরা। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত গ্রিন ট্রাইবুনালের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। ৪ ডিসেম্বর ফের এই মামলার শুনানি হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের মেয়াদ আর বাড়েনি বলে দাবি বনদপ্তরের।
বনদপ্তরের নোটিস
তবে হোম স্টে মালিকদের দাবি, এই হোম স্টেগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পড়ে না। এবং তাঁদের কাছে থাকা সার্কিট বেঞ্চের প্রতিলিপিতে বন্ধের কথা বলাও হয়নি। বনদপ্তরের এই নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এক পর্যটন ব্যবসায়ী মানব বক্সি বলছেন, "হোম স্টে কোনও দিনই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পড়ে না। তাহলে হোম স্টে বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হল?" উল্লেখ্য, ৭৬০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প। এই বনাঞ্চলের মধ্যে জয়ন্তী, বক্সা, লেপচাখা, ভুটান ঘাট, রায়মাটাং, নিমতির মতো উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান রয়েছে। এই সব এলাকায় হোম স্টে ও রিসোর্ট মিলিয়ে শতাধিক পর্যটকদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা রয়েছে।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পশ্চিম বিভাগের উপক্ষেত্র অধিকর্তা ড. হরিকৃষ্ণন বলেন, “কলকাতা হাই কোর্ট গ্রিন ট্রাইবুনালের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। স্থগিতাদেশ কয়েক ধাপে বেড়ে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল। পরে ৪ ডিসেম্বর কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ আর বাড়ায়নি। ফলে কোর্টের নির্দেশ পালন করতেই আমরা বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলের ভেতর সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধের নোটিস জারি করেছি। আদালতের নির্দেশ সকলকে মানতে হবে।"
এই রায় নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি পার্থসারথী রায়, "আমরা এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাব। এই নির্দেশ অন্যায় ও বেআইনি।" পরিবেশপ্রেমী সুভাষ দত্ত এদিন বলেন, "আমার পিটিশনে হোম স্টের কথা ছিল না। আমি শুধু কোর এলাকায় রিসর্ট, নদী থেকে বালি, পাথর তোলার কথা বলেছিলাম। গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশকে হাতিয়ার করে হাওয়া গরম করতে চাইছে বনদপ্তর।"