সুমিত বিশ্বাস, চড়িদা (পুরুলিয়া): দুর্গা গড়েন ঘরের ‘দুগ্গা’রা। হেঁশেল সামলে, সংসারের সব কাজ দেখাশোনা করে ছৌ মুখোশে দুর্গা গড়েন তাঁরা। সেই দুর্গার মুখোশ বিক্রি করে এবার পুজোর মরশুমে আয়ের মুখ দেখছেন পুরুলিয়ার (Purulia) বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়তলির চড়িদা গ্রামের বধূরা।
আসলে এই বধূরা এক একজন ‘দশভুজা’! না হলে এভাবে সংসারের সমস্ত কাজ করে মুখোশ বানিয়ে ওই সংসারের হাল ধরতে পারেন। মুখোশ গ্রাম চড়িদার (Charidha) বি রায়। তাঁর কথায়, “প্রায় ২৮ বছর হলো আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়ে হয়ে এখানে আসার পর দেখি সবাই ঘরে ঘরে মুখোশ তৈরি করেন। তা দেখে দেখেই আমিও এখন দুর্গার মুখোশ বানাতে পারি। এছাড়া মহিষাসুর, কার্তিক, গণেশ প্রায় সব রকম মুখোশের কাজই শিখে গিয়েছি। এবার দুর্গার ছোট মুখোশ ব্যাপক হারে বিক্রি হচ্ছে। তাই খুব স্বাভাবিকভাবে ওই মুখোশই আমরা তৈরি করছি।”
প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজ করছেন রুবি দেবী। এখন তাঁর বড় দোকান। সেখানে সমস্ত রকম মুখোশের পাশাপাশি মেয়েদের সাজের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। শুধুমাত্র মুখোশ তৈরি এবং বিক্রি করেই তিনি ফি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয়ের মুখ দেখেন। তাঁর কথায়, “আমার শাশুড়ি অসুস্থ। সবসময় তাঁর দিকে নজর দিতে হয়। স্বামীর আলাদা ব্যবসা রয়েছে। ফলে সেভাবে সংসারে নজর দিতে পারেন না। রান্নাবান্না-সহ সংসারের সব কাজ আমাকেই নিজে হাতে করতে হয়। তার মধ্যেই মুখোশ তৈরি করি। দোকানে বসি।”
[আরও পডুন: ‘ওই দেখো হাতি হাঁটছে!’ ফ্যাশন শোয়ে বিপাশাকে দেখে কটাক্ষ নেটিজেনদের]
চড়িদার আরেক ‘দশভুজা’ গঙ্গা পাল। বিয়ে হওয়ার পর তিনি এই গ্রামে আসেন। তিনি অবশ্য তাঁর স্বামীর কাছ থেকেই এই শিল্পকলায় হাত পাকিয়েছেন। গত ৫ বছর ধরে এই কাজ করতে করতে এখন নিজেই একটি মুখোশের (Mask) দোকান দিয়েছেন। সেই দোকান থেকে দেদার বিক্রি হচ্ছে দুর্গার ছোট মুখোশ। তাঁর কথায়, “এটা সত্যি কথা গ্রামে আমাদেরকে সবাই বলে ‘দশভুজা’! তবে ‘দশভুজা’ কিনা জানি না, সংসারের সব কাজ গুছিয়ে মুখোশ তৈরি করে যখন হাতে টাকা আসে, তখন মনে হয় কিছু একটা করলাম। আমাদের মত এই গ্রামের সব মহিলারা যাতে স্বনির্ভর হন সেটাই আমরা চাই। পুজোর সময় এক থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়ে যায় প্রতিদিন। তাই গ্রামের মেয়েদের বলব, তোমরাও আমাদের মত ছৌ মুখোশ তৈরি করে স্বনির্ভর হও।”
[আরও পডুন: টানাপোড়েনে ইতি, বিধায়কদের বেতনবৃদ্ধির বিলে ছাড়পত্র দিলেন রাজ্যপাল]
পাহাড়তলির এই গ্রামে রুবি ও গঙ্গা দেবী রীতিমতো উদাহরণ। এবার পুজোয় (Durga Puja) তাঁদের হাতে তৈরি ১২০ টাকা দামের দুর্গার ছোট মুখোশ অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের (Tourists) হাতে হাতে।
দেখুন ভিডিও: