তরুণকান্তি দাস: ইলিশে অমাবস্যা। তিথি নক্ষত্রের ঘূর্ণিপাকে অধরা রইল জামাইয়ের পাতে টাটকা ইলিশের পাতুরি। অথবা ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাক। জামাইষষ্ঠীর বাজারে ইলিশের খরা এবার। আমাবস্যার ভরা কটাল যোগে প্রতিকূল আবহাওয়ায় সমুদ্রে যেতেই পারেননি মৎস্যজীবীরা। হাতে গোনা যে কয়েকটি ট্রলার গিয়েছিল, সেগুলি তড়িঘড়ি কাছাকাছি পাড়ে ভিড়েছে। অথবা নোঙর করতে বাধ্য হয়েছে তীরবর্তী এলাকায়।
প্রশাসনের সতর্কবার্তা মেনে মাছ ধরায় দাঁড়ি টেনে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত মৎস্যজীবীরা। ফলে ইলিশ তো দূরের কথা জিভে জল আনা পমফ্রেট, চিংড়িও এবার জামাইষষ্ঠীর বাজারে দুর্মূল্য হয়ে উঠতে পারে। ভরসা স্রেফ হিমঘরের ইলিশ। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তা ছাড়া ১৫ জুনের পর টাটকা মাছ উঠবে এই নিয়ম মেনে চলা বাজার অনেক আগেই হিমঘরের ইলিশ বিক্রি শুরু করে দিয়েছে। তাই টান ভাঁড়ারে। গত ১৫ জুন নিষেধাজ্ঞা ওঠে মাছ ধরায়। পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যান মাছ ধরতে। কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি। উত্তাল সমুদ্র। ঝোড়ো হাওয়া। আতঙ্ক বাড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা। ফলে প্রশাসনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সমুদ্রে যাওয়া যাবে না। যাঁরা গিয়েছেন, যেন দ্রুত ফিরে আসেন অথবা নিরাপদ স্থানে নোঙর করেন। ফলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নিজেদের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মৎস্যজীবীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ট্রলার যায় সমুদ্রে বা নদীতে মাছ ধরতে।
[রাম-সীতার প্রাইভেট কোম্পানি খুলেছেন বিজেপি নেতারা, কটাক্ষ মদনের]
এখানকার মৎস্যজীবী সংগঠনের কর্তা বিজন মাইতি বলেছেন, “অমাবস্যার যোগে আবহাওয়া প্রতিকূল হয়ে ওঠে। ১৫ জুন যাত্রা শুরুর কথা ছিল সবার। তার একদিন আগে ছিল অমাবস্যার কটাল। সঙ্গে ঝড়-বৃষ্টি। ফলে সমুদ্র ছিল উত্তাল। স্রোতে ঘূর্ণি। প্রতিকূল পরিবেশ। ফলে অধিকাংশ ট্রলার মাছ ধরতে যেতে পারেনি। আর যেগুলি গিয়েছিল সেগুলি তড়িঘড়ি ফিরে আসে বা নিরাপদ স্থানে নোঙর করে। কেন না দুপুরেই জেলা প্রশাসন সতর্কবার্তা দিয়েছিল। রবিবারও কেউ যায়নি। তাই ইলিশের মুখ দেখার প্রশ্নই নেই।” দিঘা-শংকরপুর ফিশ ট্রলার অ্যসোসিয়েশনের কর্তা শ্যামসুন্দর দাস বলেন, “শুরুতেই ধাক্কা খেতে হল৷ জামাইষষ্ঠীর বাজার ধরতে পারল না বাংলার ইলিশ।” নদী ও সমুদ্রে যাতে মাছ নিশ্চিন্তে ডিম পাড়তে পারে ও উৎপাদন বেশি হয়, খোকা ইলিশ ধরা না পড়ে সেজন্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকে ১৫ জুন পর্যন্ত।
শ্যামসুন্দরবাবু মজা করে বলেছেন, “সরকারের নিষেধাজ্ঞা উঠলেও প্রকৃতির নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই মাছ মিলবে না।” তাঁর বক্তব্য, “ছোট-বড় মিলিয়ে দিঘা ও শঙ্করপুরে প্রায় ৪৫০০ ট্রলার রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় হাজার তিনেক তৈরি ছিল সমুদ্রে যেতে। ১৫ তারিখ কিছু রওনা হয়। তারপর বাধ্য হয়েছে ফিরে আসতে অথবা মাছ ধরা বন্ধ রেখে সমুদ্রে ভেসে থাকতে। কেন না উত্তাল সমুদ্র এখন রীতিমতো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের নির্দেশ মানতেই হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি রয়েছে তো।” দিঘা ফিশ ট্রলার সংগঠনের এক সদস্য সুধাংশু জানা বলেন, “ছোট দুই সিলিন্ডারের কিছু ভুটভুটি গিয়েছিল। ফিরেছে। তারা রোজ যায়, রোজ ফেরে। যেটুকু ইলিশ পেয়েছে তা বলার মতো নয়। বড় ট্রলার না ফিরলে সামুদ্রিক মাছ অধরাই থেকে যাবে জামাইষষ্ঠীর বাজারে।” এই অবস্থায় হিমঘর ভরসা। কিন্তু সেখানেও তেমন মজুত নেই। ফলে জামাইয়ের রসনা তৃপ্তির জন্য যদি ইলিশের পেটি পাতে দিতে হয় তো বাড়তি কড়ি গুনতে হবে, এটা নিশ্চিত৷
The post ভিলেন অমাবস্যা, জামাইদের পাতে ইলিশের আকাল appeared first on Sangbad Pratidin.
