জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: বাংলাদেশের জেলে বন্দি স্ত্রীকে ভারতে ফেরাতে হন্যে ঘুরছেন স্বামী। ইতিমধ্যে দিল্লির কেন্দ্রের একাধিক দপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলেই অভিযোগ। বোয়ালদহ এলাকার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ চৌধুরীর আক্ষেপ, ''স্ত্রী একজন ভারতীয় নাগরিক। বৈধভাবে বাংলাদেশে গিয়ে বিপদে পড়েছে। ভারত সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ করেছি যেন তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু এখনও কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।''
জানা গিয়েছে, প্রসেনজিৎ চৌধুরী বনগাঁ থানার বোয়ালদহ এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। গত কয়েকবছর আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় ফাল্গুনী রায়ের। প্রসেনজিৎ জানিয়েছেন, ''বনগাঁ থানার ট্যাংরা কলোনির এক ব্যক্তির সঙ্গে ফাল্গুনী রায়ের প্রথম বিবাহ হয়েছিল। যিনি ভারতীয় পরিচয় ব্যবহার করলেও আসলে ছিলেন বাংলাদেশি।'' তাঁর কথায়, এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না ফাল্গুনী। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ফাল্গুনীকে ফেলে চোরাপথে বাংলাদেশ পালিয়ে যায় ওই ব্যক্তি। প্রসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, ''বিবাহবন্ধনে থাকাকালীন তাঁদের একটি পুত্র সন্তান জন্মায়। এর মধ্যেই ফের ওই ব্যক্তি ফিরে আসেন। কিন্তু নতুন করে অশান্তি হওয়ায় ফের বাংলাদেশে ফিরে যান ওই ব্যক্তি।'' সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে যান বলে দাবি।
এরপর থেকে একাই থাকতেন ফাল্গুনী রায়। এর মধ্যেই প্রসেনজিতের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সময়ের সঙ্গে ক্রমশ সম্পর্ক গভীর হয়। দু’জনেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এর মধ্যেই ২০২৩ সালে ছেলে সম্পর্কে খোঁজ নিতে ভারতীয় পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে যান ফাল্গুনী। অভিযোগ, সেখানে প্রথম পক্ষের স্বামী তাঁর বৈধ পাসপোর্ট এবং অন্যান্য ভারতীয় পরিচয়পত্র কেড়ে নেয় এবং প্রাণে মারার হুমকি দেয়। বিপদের মুখে তিনি প্রসেনজিতকে খবর দেন এবং প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ বিজিবি-র কাছে ছুটে যান।'' কিন্তু লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ।
এই প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বলেন, ''স্ত্রীর কাছে বৈধ পরিচয়পত্র না থাকায় প্রথমে তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে। যদিও ঘটনার কথা জানতে পেরে বৈধ ভিসা ও পাসপোর্ট নিয়ে ঝিনাইদহে পৌঁছে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানাই। এমনকী বাংলাদেশের আদালতেও জানানো হয়।'' তাঁর কথায়, ''ফাল্গুনীর বৈধ প্রবেশের নথিপত্র দেখালে আদালত সাজা মুকুব করে দেন। কিন্তু এরপরেও তিনি বন্দি রয়েছেন তিনি।'' এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলেও দাবি প্রসেনজিৎ চৌধুরীর। বলেন, ''ভারতে ফিরে বিদেশমন্ত্রক, জেলা শাসক ও এসপি অফিসে একাধিকবার আবেদন করি ফাল্গুনীকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।'' এই পরিস্থিতিতে আদৌও বাংলাদেশে আটক থাকা স্ত্রীকে ফেরানো সম্ভব? সেই চিন্তাতেই রাতের ঘুম উড়েছে প্রসেনজিৎ চৌধুরীর।
