নব্যেন্দু হাজরা: চন্দননগর (Chandannagar) মানে আলোর রোশনাই। সারা বছর উৎসবের মরশুমের অপেক্ষায় থাকেন আলোকশিল্পীরা। করোনার জেরে গত বছর থেকেই মন্দা যাচ্ছে। তবে হাল ছাড়তে রাজি নন শিল্পীরা। এবার নতুন চমক থাকছে তাঁদের আলোর কারুকাজে। টোকিও অলিম্পিকের (Tokyo Olympics 2021) আঙিনায় ভারতীয়দের সাফল্যকে এবার পুজোয় আলোর বর্ণমালায় তুলে ধরবেন চন্দননগরের শিল্পীরা। শ্রীভূমি (Sreebhumi) স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোয় দেখা যাবে বিশেষ এই আলোকসজ্জা।
গণেশ পুজো (Ganesh Utsav) থেকে শুরু করে বছর পেরিয়ে সেই সরস্বতীর আরাধনা। প্রায় ছ’সাত মাসের এই ফেস্টিভ সিজনের উপর ভর করে সারা বছরের রসদ জোগাড় করে থাকেন চন্দননগরের আলোক শিল্পীরা। কিন্তু করোনার (Coronavirus) জেরে গত দু’বছর ধরে ব্যবসা ভীষণ মার খেয়েছে। পুজো কমিটির বাজেট ছাঁটাই হয়েছে। কোপ পড়েছে লাইটিংয়েও। বরাত না পেয়ে চন্দননগরের প্রচুর শিল্পী অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন। তবে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ঘটনার ভিত্তিতে লাইটিং করলে ভাল বরাত পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন অন্যরা। শিল্পী বাবু পাল তেমনই একজন। এবার পুজোয় তাঁর থিম টোকিও অলিম্পিক।
[আরও পড়ুন: Ganesh Puja: ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ লিখে শুভেচ্ছা প্রসেনজিতের, লালবাগের গণেশ দর্শনে অমিতাভ]
নীরজ–চানুদের চোখ ধাঁধানো সাফল্যকে আলোর মালায় ফুটিয়ে তুলবেন বাবু পাল। তাঁদের পদক জয়ের নানা মুহূর্তকে তুলে ধরে দেশবাসীকে চমকে দেওয়ার ভাবনা শিল্পীর। প্রতিবছরই পুজোয় চন্দননগরের আলোয় সাম্প্রতিক ঘটনা উঠে আসে। কোনওবার ক্রিকেটে ভারতের বিশ্বকাপ জয়, কোনওবার আয়লার ভয়াবহ রূপ, কোনওবার আবার ভূমিকম্প। গতবছরের বিষয় ছিল অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের (Sushant Singh Rajput) মৃত্যু। এবার তেমনই ফুটিয়ে তোলা হবে টোকিও অলিম্পিকে ভারতের সোনা–রুপো–ব্রোঞ্জ পদক জয়। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে এবার এই আলোর থিম করা হচ্ছে।
শিল্পী জানান, শুধু ভারতের পদক জেতাই নয়, থাকছে হেলিকপ্টার ওড়ার দৃশ্য থেকে ডিজনিল্যান্ড সবই। তবে শুধু বাবু পাল নন। অন্যান্য আলোকশিল্পীরাও পুজোয় নতুন চমক দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে প্রত্যেকেই মানছেন বাজার খারাপ। চন্দননগরেরই আরেক আলোকশিল্পীর কথায়, বাজেটে ব্যাপক কাটছাঁট করেছে পুজো কমিটিগুলো। যে পুজোকমিটি ১০ লক্ষ টাকার আলোর বরাত দিত পুজোয়, এবার সে চার লক্ষ টাকাও দিতে চাইছে না।
গত দু’বছর ধরে সেভাবে কাজ হয়নি। অন্যান্যবার গণেশ পুজোয়, দীপাবলিতে ভিনরাজ্যে আলো যায়, কিন্তু এবার সেই বরাতও নেই। কাজ না থাকায় গত বছর থেকেই প্রচুর কর্মী অন্য পেশা খুঁজে নিয়েছেন। তবুও এত খারাপের মধ্যেও পুজোয় আলোতে চমক রাখছে চন্দননগর। চন্দননগর লাইট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বাবু পাল বলেন, “আলোর বাজার খুব খারাপ। অনেক শিল্পীই এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। তবুও কিছু তো চমক রাখতে হবে পুজোতে। এবার আলোর বর্ণমালায় টোকিও অলিম্পিকে ভারতের পদক জয়কে আমি ফুটিয়ে তুলছি।”