অসিত রজক, বিষ্ণুপুর: বিপিনবাবুর কারণ সুধা, মেটায় জ্বালা মেটায় ক্ষুধা...। পৌষে সুরার পৌষমাস। বিষ্ণুপুর মেলা উপলক্ষ্যে সুরার বাজার রমরমা। মেলার চারদিন পেরনোর মধ্যেই প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়ে গিয়েছে! এমনকি, গত বছরের ৬ কোটি বিক্রির রেকর্ডও ভেঙে গিয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এখনও অবধি ৭ কোটি টাকারও বেশি মদ বিক্রি হয়েছে বলে আবগারি দপ্তর জানিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে যে পরিমাণ মদ বিক্রি হয়, মেলা ও পর্যটনের মরশুমের জন্য সেই বেচাকেনা দ্বিগুণ হয়েছে। দোকান মালিক ও আবগারি দপ্তরের তরফে এই কথা জানা গিয়েছে। বিদেশি মদের পাশাপাশি দেশি মদের চাহিদাও তুঙ্গে। সঙ্গে শীতের আমেজ গায়ে মেখে শুরু হয়েছে মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরের পর্যটনের মরশুম।
ডিসেম্বরের শুরু থেকেই দলে দলে পর্যটকরা আসছেন এই মল্লভূমের টেরাকোটা মন্দির ও মল্ল রাজাদের বিভিন্ন স্থাপত্য চোখ ভরে দেখার জন্য। তাই বিষ্ণুপুর টুরিস্ট লজ থেকে হোটেলগুলিতে এখন যেন ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে ৩৭ তম বিষ্ণুপুর পর্যটন, সাংস্কৃতিক ও হস্তশিল্প উৎসব। এর সঙ্গে জুড়েছে ‘জেলা সবলা মেলা’ ও ‘সৃষ্টিশ্রী’ মেলা। তাই গোটা বিষ্ণুপুর জুড়েই এখন মানুষের মেলা। পর্যটকদের খানাপিনার জন্য হোটেলগুলি তো রয়েইছে। শীতের মরশুমে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন পানশালাগুলিতেও। আবগারি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি দেশি-বিদেশি মদ বিক্রি হয়েছে।
বিষ্ণুপুর শহর এলাকায় সব মিলিয়ে মোট আটটি মদের দোকান। এসব দোকান মিলিয়ে বিষ্ণুপুর মেলার চারদিন প্রায় ৬ শতাংশ বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। বিগত বছরগুলির তুলনায় যা অনেকটাই বেশি। টাকার অঙ্কে যা ৭০ লক্ষের কাছাকাছি। এর ষাট শতাংশ অর্থ সরকারের কোষাগরে ঢুকেছে। অর্থাৎ, বিষ্ণুপুর মেলার চার দিনে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা রাজস্ব হিসেবে ঢুকেছে সরকারি কোষাগারে।
বিষ্ণুপুর শহরের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, মেলা উপলক্ষে প্রতিদিন যে পরিমাণ মদের বিক্রিবাটা হয়, তার চেয়েও এবার বেশি পরিমাণে মদ বিক্রি হয়েছে। বিষ্ণুপুর মেলা ছাড়াও ডিসেম্বর মাসে বড়দিনের পিকনিকের কারণেও মদের বাজার ‘ভালো’ থাকে। কোনও ব্যবসায়ী এক লক্ষ তো কোনও দোকানদার ৪ লক্ষ টাকারও বেশি মদ বিক্রি করেছেন বড়দিনে। যা গত বছরের তুলনায় রেকর্ড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিষ্ণুপুর আবগারি বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, "প্রতি বছরই শীতকালে মদের বিক্রি বাড়ে। বিষ্ণুপুর মেলা উপলক্ষে প্রতিদিন যে পরিমাণ মদ বিক্রি হয়, তার চেয়ে এবার প্রায় ছয় শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "গত বছরে ডিসেম্বর মাসজুড়ে জেলায় ৬ কোটি টাকার বেশি মদ বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার সাত কোটি টাকারও বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। এর জন্য সরকারের রাজস্ব আদায় অনেক বেশি হয়েছে।"