অর্ণব দাস, বারাসত: বাম, কংগ্রেস এবং আইএসএফ-এর মধ্যে আসন সমঝোতা যে হচ্ছে না, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস এবং আইএসএফ নিজেদের প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করার পর সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বারাসত (Barasat) লোকসভা কেন্দ্রে আইএসএফ প্রার্থী দিয়ে তৃণমূল-বিজেপির সরাসরি দ্বৈরথ কিছুটা কঠিন করে দিল, বলাই বাহুল্য। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত এমন একটি কেন্দ্র, যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি থাকায় রাজনৈতিক বৈচিত্র্যের সাক্ষী। তবে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তা মোটের উপর ঘাসফুলেরই দখলে। এবারও শাসক প্রার্থী ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের জয়ের পাল্লা ভারী। তবে বাকিরাও লড়াইয়ে কম বেগ দেবে না বলেই মনে করছে বিশ্লেষকদের একাংশ। আসুন দেখে নেওয়া যাক চব্বিশের লোকসভা ভোটে (Lok Sabha Election 2024) কেমন হতে চলেছে বারাসত কেন্দ্রের লড়াই।
ইতিহাস
১৯৫২ সালে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের আত্মপ্রকাশ। সেসময় কংগ্রেসের দখলে ছিল এই কেন্দ্র। সাংসদ (MP) ছিলেন অরুণচন্দ্র গুহ। ১৯৬৭ সাল থেকে ‘হাত’ শিবির কার্যত গুঁড়িয়ে লাল নিশান ওড়াতে শুরু করে বামেরা। বারাসতে কখনও সিপিএম, কখনও ফরওয়ার্ড ব্লক (Forward Block) থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে সিপিএমের রণেন্দ্রনাথ সেন পর পর দুবার জয়ী হয়েছিলেন। তার পর ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বারাসত কেন্দ্রে দাপট দেখিয়েছে ‘সিংহ’বাহিনী অর্থাৎ ফরওয়ার্ড ব্লক। পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন চিত্ত বসু। এর পর কালক্রমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস আত্মপ্রকাশ করার পরই বামেদের হাত থেকে বারাসত ছিনিয়ে নেয় ঘাসফুল শিবির। তৃণমূলের হয়ে লড়াই করে প্রথম সাংসদ হন স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ রঞ্জিত পাঁজা।
[আরও পড়ুন: চলছে গুলি, লুটিয়ে পড়ছে রক্তাক্ত মানুষ! দেখুন মস্কোয় হাড়হিম করা জঙ্গি হামলার ভিডিও]
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০০৯ সালের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সুধীন চট্টোপাধ্যায়, ২০১৪ সালে মোর্তাজা হোসেন এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে হরিপদ বিশ্বাসকে হারিয়ে পর পর তিনবার বারাসতের সাংসদ হন তৃণমূলের ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনিও এলাকায় যথেষ্ট নামী চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও বারাসতে শাসক শিবিরের বাজি সেই কাকলি ঘোষ দস্তিদারই।
বিধানসভা কেন্দ্র
বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা আসন:
- বারাসত
- অশোকনগর
- মধ্যমগ্রাম
- দেগঙ্গা
- হাবড়া
- রাজারহাট নিউটাউন
- বিধাননগর
বিগত নির্বাচনে ফলাফল
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল (TMC)। দেখে নেওয়া যাক প্রাপ্ত ভোট
- তৃণমূল ৪৬.৪৭ শতাংশ
- বিজেপি ৩৮.৫৭ শতাংশ
- ফরওয়ার্ড ব্লক ৮.৮৯ শতাংশ
- কংগ্রেস ২.৬৭ শতাংশ
চব্বিশের লড়াই
এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী ফের কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট নেই। আইএসএফ একতরফাভাবেই তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছে। এদিকে একদা বামের শক্ত ঘাঁটি ফরওয়ার্ড ব্লক এই আসন ছাড়তে নারাজ।
আইএসএফ প্রার্থী ঘোষণা করতেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রথম থেকেই বারাসত লোকসভায় আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছি। আমাদের দাবি ছিল, বারাসত লোকসভা জোটের পক্ষ থেকে ফরওয়ার্ড ব্লককে দেওয়া হোক। কিন্তু তাতে পাত্তা না দিয়েই আইএসএফ প্রার্থী দিয়ে দিল। তবে আমরা বারাসতে লড়ব, এটা পুরোপুরি নিশ্চিত। সেই মতো আমাদের দেওয়াল লিখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। কয়েকদিনের মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা হলে আমাদের প্রচার শুরু হবে।”
সিপিএমের (CPM) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আইএসএফ কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তার সবটায় সাযুজ্য আছে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু এখনও সময় আছে। আলোচনা প্রক্রিয়া চলছে। তাই এখনই এ নিয়ে কিছু মন্তব্য করব না। তবে, বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।” ফলে সিপিএম প্রার্থী দেবে নাকি এই আসন ফরওয়ার্ড ব্লককে ছাড়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও ঝুলে রয়েছে।
[আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোর ‘ওভারহাইপড’! প্রাক্তন ভোটকুশলীকে নিয়ে বিস্ফোরক অভিষেক]
তবে বিষয়টিকে কেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন নারাজ বারাসত কেন্দ্রের তিনবারের সাংসদ তৃণমূল প্রার্থী ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁর কথায়, ”অন্য রাজনৈতিক দলে কার সঙ্গে কার জোট হল কি হল না, সেক্ষেত্রে আমার কিছু বলার নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হতে পারে। মানুষ যাঁকে পছন্দ করবেন তিনিই জিতবেন। উন্নয়নের নিরিখে মানুষ আমাকেই জয়ী করবেন বলেই বিশ্বাস করি।” আগামী ১ জুন, সপ্তম দফায় এই কেন্দ্রে ভোট।