দীপঙ্কর মণ্ডল: পায়ে রবারের চপ্পল। পরনে পাজামা–ফতুয়া, গলায় গামছা। মাথায় জামা-কাপড়ের বস্তা। পকেটে সামান্য কিছু টাকা, যা সম্বল করে মঙ্গলবার দুপুরে ২৫০ কিমি দূরের বাড়িতে ফেরা শুরু করলেন ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকরা। বালি সেতুর গোড়ায় জড়ো হল দু’টি দল। সব মিলিয়ে ২৪ জন। দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে তাঁরা যাবেন বর্ধমান। তারপর আসানসোল হয়ে ধানবাদ। ঝাড়খণ্ডে ঢুকে বিভিন্ন গ্রামে ফিরবেন তাঁরা।

দলটির সঙ্গে কিছুক্ষণ হেঁটে জানা গেল, প্রত্যেকেই শ্রমিক হিসাবে এ রাজ্যে কাজ করতে এসেছিলেন। কেউ নির্মাণশ্রমিক, কেউ বা কারখানায়। হঠাৎ লকডাউনে আটকে পড়েন সবাই। কাজ বন্ধ, মালিকরা বেতন দেননি। কয়েকদিন আগে তেলেঙ্গানা থেকে রাঁচিতে দেশের প্রথম ‘শ্রমিক স্পেশাল’ আসার খবর তাঁরা জানেন। তখন থেকে আকুল হয়ে ওঠেন বাড়ি ফেরার জন্য। ঝাড়খণ্ড সরকার একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলেছে। একটি হেল্পলাইন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। এই শ্রমিকরা কয়েকবার সেই নম্বরে ফোনও করেছিলেন। কিন্তু উত্তর মেলেনি। অ্যাপ নেওয়ার মতো স্মার্ট ফোন তাঁদের নেই। এদিকে রান্নার রসদও ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। কেউ কেউ সাহায্য দিয়ে গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা বড্ড কম। তাহলে উপায়? মিলিতভাবে রামবিলাস, কুশল, সনুরা সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফিরবেন পায়ে হেঁটেই। অথচ গোটা দেশে প্রথম ঝাড়খণ্ড সরকার নিজেদের লোকজনকে ঘরে ফেরাতে অন্য রাজ্যগুলিকে চাপ তৈরি করেছিল! তবে এতটা রাস্তা কী খাবেন? মাঝবয়সি রামবিলাস ওঝা দেখালেন, বস্তায় চিড়েমুড়ি আছে। রাস্তায় নিশ্চয়ই জল পাওয়া যাবে।
[আরও পড়ুন:জল্পনার অবসান, কলকাতা পুরসভায় মুখ্য প্রশাসক পদে বসতে চলেছেন ফিরহাদ হাকিমই]
ঝাঁ ঝাঁ দুপুর। বেশ ভারী একটি ব্যাগ নিয়ে কষ্ট হচ্ছিল বাবুলালের। মুখে হাসি আনার চেষ্টা করছিলেন। এখনই তো ক্লান্ত। এত পথ কী করে যাবেন? “মেরে লেড়কিকে লিয়ে হাম ঘর যানা চাহতে হ্যায়”, চোখে চোখ রেখে জানালেন ধানবাদের নিরসার বাসিন্দা। ছয় বছরের মেয়ের জন্য বেশকিছু খেলনা কিনেছেন বাবা। মাথার ব্যাগের দিকে আঙুল নির্দেশ করে দেখিয়েও দিলেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে ঝাড়খণ্ড সরকারের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধানবাদের দিকে শ্রমিকদের ঘরে ফেরার বিষয়ে কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই।” ধানবাদ গ্রামীণের পুলিশ সুপার অমিত রেণু জানিয়েছেন, “ভিন রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যে কেউ ঘরে ফিরতে চান জানতে পারলেই আমরা বাস পাঠাচ্ছি। ডেপুটি কমিশনারের অফিস থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আপনি যাঁদের কথা বলছেন পশ্চিমবঙ্গের তরফে কোনও তথ্য এখনও আমাদের কাছে আসেনি।”
[আরও পড়ুন:গরহাজির কর্মীদের বেতন কাটা শুরু কলকাতা পুরসভায়]
বাড়ি ফেরার পথে বালি সেতুর গোড়ায় ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকদের আটকেছিল হাওড়া কমিশনারেটের পুলিশ। শ্রমিকদের জানানো হয় সরকারি ক্যাম্প আছে। কারও থাকা–খাওয়ার অসুবিধা হবে না। কয়েকজন ক্যাম্পে গেলেও বেশিরভাগ শ্রমিককে রাখা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষায়। বাড়ি ফিরতে সবাই মরিয়া। এই কারণে কাউকে জোর করে আটকানো যায়নি।
The post হেঁটেই যাবেন ২৫০ কিমি! ঝাড়খণ্ডে ফিরতে বাংলা থেকে রওনা ২৪ শ্রমিকের appeared first on Sangbad Pratidin.