সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহাপঞ্চমীর সকালে আচমকাই তাঁর সাংবাদিক বৈঠক ডাকা নিয়ে ছিল টানটান উত্তেজনা। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায় সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন, তিনি দল ছাড়ছেন। রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন পুজোর পর। যা দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মহাপঞ্চমীর দিনই ‘বিসর্জন’ হয়ে গেল মুকুল রায়ের! এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুল জানিয়ে দিলেন, তৃণমূলের সদস্যপদ ছেড়ে দিচ্ছেন। রাজ্যসভার সাংসদ পদও ছাড়বেন দ্রুতই। তাঁর বক্তব্য, ‘দলের কর্মসমিতি থেকে পদত্যাগ করছি। প্রাথমিক সদস্যপদও ছেড়ে দিচ্ছি।’ পুজো কেটে গেলে পুরো বিষয়টি খোলসা করবেন বলেও জানান তিনি। দলের মধ্যে গুরুত্ব পাচ্ছেন না বলেই যে তৃণমূল ছাড়ছেন, সেই ক্ষোভও গোপন রাখেননি। বলছেন, ‘১৯৯৭-তে যখন তৃণমূল প্রতিষ্ঠিত হয়, আমি সেদিন থেকে দলে রয়েছি।’ দল ছাড়তে তাঁর কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দিল্লিতে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন, এই অভিযোগে গত কয়েক মাস ধরেই দলের মধ্যে কার্যত ব্রাত্য হয়ে ছিলেন তিনি।
[রাজ্যের দেওয়া ‘জেড’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা ছাড়লেন মুকুল]
কয়েকদিন আগেই রাজ্যের দেওয়া জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা ছেড়ে দেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। সম্প্রতি দলীয় মুখপত্রের উৎসব সংখ্যা প্রকাশের অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি তাঁকে। এড়িয়ে গিয়েছেন স্ত্রী অসুস্থ বলে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তৃণমূলের দলীয় নথিতে কোনও সাংগঠনিক পদেই মুকুল রায়ের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরেই তাঁকে দলের সবরকম আনুষ্ঠানিক পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয় বলে সূত্রের খবর। আর তারপর থেকেই মুকুলের নতুন করে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে প্রবল জল্পনা। ঋতব্রতকে নিয়ে নতুন দল শুরু করতে পারেন মুকুল, শোনা যাচ্ছিল এমনটাই। তবে ঋতব্রত সম্ভবত যাচ্ছেন কংগ্রেসে। তাই আপাতত সেই জল্পনা খানিকটা থিতিয়ে এসেছে। কিন্তু মুকুল যে তৃণমূল ছেড়ে দেবেন, সেটা যেন একরকমভাবে স্থির হয়েই গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন মুকুল রায়। তাঁকে ওই পদ থেকেও দল অব্যাহতি দিয়েছে। মুকুল রায়ের বিকল্প হিসাবে মণীশ গুপ্তর নাম প্রস্তাব করে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদও খোয়ান মুকুল রায়। নির্বাচন কমিশনে সম্প্রতি ২১ জন পদাধিকারীর যে তালিকা দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তাতে সহ-সভাপতির পদটিই নেই। ওই পদেই ছিলেন মুকুলবাবু, সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী ও সদ্য প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদ। সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ উঠে যাওয়ায় মুকুলবাবু শুধুই দলের ওয়ার্কিং কমিটি ও রাজ্য তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য ছিলেন। আজ দলের সব পদ থেকেই অব্যাহতি চাইলেন তিনি।
[মুকুল রায়ের নতুল দলেই কি এবার ঋতব্রত?]
তৃণমূলে তাঁর পদের ভার যে লাঘব হচ্ছে তা গত কয়েক মাসে অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। এক এক করে মুকুল রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয় পরিবহণ, পর্যটন ও সংস্কৃতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে। এরপরও মুকুল রায়ের সঙ্গে দিল্লির যোগাযোগ হিসাবে ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির সদস্য থাকা। কিন্তু সেই দায়িত্ব থেকেও তাঁকে রেহাই দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। মুকুল রায়ের জায়গায় রাজ্যসভার আর এক সাংসদ মণীশ গুপ্তকে আনা হতে পারে। কিছু দিন আগে তিনটি স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পদে মুকুল রায়ের জায়গায় আনা হয়েছিল ডেরেক ও’ব্রায়েনকে। কেন্দ্রীয় রাজনীতি শুধু নয় একদা দলের ‘সেকেন্ড ম্যান’ বিহার, ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরা এবং পাঞ্জাবের দায়িত্ব থেকে মুকুল রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে তিনি তৃণমূল না ছাড়লে হয়তো দলই তাঁকে বহিষ্কার করত। আজ দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন পার্থ। তিনি মুকুলের পদত্যাগ প্রসঙ্গে কী বলেন, সেটাই এখন দেখার।
[এবার নিজের দলেই নজরদারির মুখে মুকুল রায়]
The post জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে তৃণমূল ছাড়লেন মুকুল appeared first on Sangbad Pratidin.
