সুমন করাতি, হুগলি: কিডনির সমস্যা ভুগছেন মুর্শিদাবাদের সালারের শিবানী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু অর্থের অভাবে একাধিক পরীক্ষা করাতে পারেননি। সম্প্রতি অসুস্থতা বাড়লে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখান থেকে প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে 'রেফার'। তার পর আবার তাঁকে রেফার করা হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার মতো অর্থ নেই। ফলে অসুস্থ শিবানীদেবীকে টোটোয় চড়িয়েই রওনা দিতে বাধ্য হলেন স্বামী উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর টোটোর চার্জ শেষ হয়ে যায়। ডানকুনিতে থমকে যায় যাত্রা। এর পর সেখান থেকে অবশ্য নতুন পথ খুলে যায় তাঁদের কাছে, ডানকুনি পুরসভার চেয়ারপার্সনের হাত ধরে। চিকিৎসার জন্য গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শিবানীদেবী। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই রেফার 'রোগে'র ইতি পড়বে কবে? কেন্দ্রীয় রেফারেল সিস্টেম চালুর পরও কেন এতটা ঝুঁকি নিয়ে বৃদ্ধা রোগীকে পথে পাড়ি দিতে হবে? উত্তর এখনও অজানা।
সালারের বাসিন্দা উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসুস্থ স্ত্রী শিবানী। টোটো চালিয়েই দিন গুজরান হয় তাঁদের। স্ত্রীর ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য ছেলের পড়াশোনাতেও ছেদ পড়েছে। স্ত্রী শিবানী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। কয়েকদিন আগে অসুস্থতা বাড়লে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম হাসপাতালে স্ত্রীকে নিয়ে যান উপেনবাবু। সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যালে রেফার করার কথা বলা হয়। অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করার মতো অর্থ না থাকায় উপেনবাবু স্ত্রী ও ছেলে অনিরুদ্ধকে নিয়ে টোটো করে কলকাতার পথে রওনা হন। প্রায় ১৬ ঘন্টা পর, বুধবার রাতে হুগলির ডানকুনিতে টোটোর ব্যাটারি চার্জ শেষ হয়ে যায়। সেখানে চার্জ দিতে গেলে বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয়রা। তখনই তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ডানকুনি পুরসভার চেয়ারপার্সন হাসিনা শবনমের কাছে খবর পৌঁছয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে শিবানীদেবীর জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেন। রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশে রওনা দেন উপেনবাবু। তিনি জানান, বর্ধমান থেকে কলকাতায় আসার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া চাইছিল ৭ হাজার টাকা। সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর কাছে নেই। এসব শুনে ডানকুনির স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু টাকা তুলে দেন, খাবার দেন, জল দেন। এর পর চেয়ারপার্সনের ঠিক করে দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে কলকাতার দিকে রওনা হন। বৃহস্পতিবার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শিবানীদেবী। শুরু হয়েছে চিকিৎসা। কিন্তু প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে, এতবার রেফার কেন? তাহলে কেন্দ্রীয় রেফারেল সিস্টেম চালু হওয়ার পরও কেন এত হয়রানি?