রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: বাড়ির সামনেই চেয়ারে বসে আছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। পা ধুইয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। গলায় মালা পরিয়ে বরণ করাও হচ্ছে। লাল বসন পরা এক প্রৌঢ় এই গোটা বিষয়টির উদ্যোক্তা। আলিপুরদুয়ার শহরে এই ঘটনা প্রতি বছর ঘটে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পুজো করেন প্রদীপকুমার সরকার।
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। বিবেকানন্দের সেই ভাবধারাকে পাথেয় করে প্রতি বছর ১ জানুয়ারির দিন ভগবানরূপে দুঃস্থ মানুষদের পুজো করেন আলিপুরদুয়ার শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রদীপকুমার সরকার। এই দিন প্রদীপবাবুদের বাড়ির তারা মায়ের মন্দিরেও পুজো হয়।
এই উপলক্ষে অন্নভোগের আয়োজনও হয়। খাবারে কোনও খামতিও ছিল না। প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, “দুঃস্থ মানুষরা সমাজে কোথাও তেমন দাম পান না। আমি প্রতি বছর এই শুভ তিথিতে দুঃস্থ মানুষদের পুজো করি। এতে আমার মনের তৃপ্তি আসে। মানুষ সকলেই সমান। কিন্তু সমাজ আমাদের মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে।এই উপলক্ষে খাওয়া দাওয়া করি সকলে এক সঙ্গে।”
জানা গিয়েছে, দুঃস্থ মানুষদের প্রথমে গঙ্গা জল দিয়ে পা ও হাত ধুইয়ে দেন প্রদীপবাবু। তারপর তাঁদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে দেওয়া হয়। আর তারপরে ফল, ফুল, ধূপধুনো দিয়ে পুজো দেওয়া হয়। শীতের কম্বল দেওয়া হয় তাঁদের। পুজো পেয়ে খুশি দুঃস্থরা। অশীথিপর কুমারী রায় বলেন, "একেবারে ভগবানের মতো করে আমাদের পুজো করা হয়। আমাদের খুব ভাল লাগে। যত্ন করে খাওয়াদাওয়া ও শীতের কম্বল পাই। এত আদর আর কোথাও পাই না আমরা।"
এদিন এই মানবপুজো অনুষ্ঠানে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসিন্দারা উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালও। সকলেই মানব পুজোর এই ভাবনাকে প্রশংসা করেছেন। পেশায় ব্যবসায়ী প্রদীপবাবুকে এক ডাকেই চেনেন সকলে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে তিনি এই পুজোর আয়োজন করছেন।