সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ডাকাতি, ছিনতাইয়ের দ্রুত কিনারা থেকে চটজলদি খুনের আসামি ধরা। সেই সঙ্গে নানান মানবিকতার পরিচয়। এমনকী কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানো। ২৭ বছরের বেশি সময় ধরে পুলিশের কাজে একটিও বিভাগীয় ‘পানিশমেন্ট’ নেই। আর এই দীর্ঘ পুলিশের চাকরিতে একের পর এক সাফল্যে ভারতীয় পুলিশ পদক পাচ্ছেন পুরুলিয়ার আধিকারিক। সাব ইন্সপেক্টর জয়ন্তকুমার চক্রবর্তী। ১৪ই আগস্ট কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে এই পুরস্কারের কথা রাজ্য তথা পুরুলিয়া জেলা পুলিশকে জানানো হয়। তবে এই পুরস্কারের সুযোগ-সুবিধা হাতে পেতে প্রায় বছর দুয়েক লাগবে।
দীর্ঘদিন পর জঙ্গলমহলের এই জেলায় ‘পুলিশ মেডেল ফর মেরিটোরিয়াস’ সার্ভিস-এর শিরোপা পাচ্ছেন কোনও পুলিশ আধিকারিক। ফলে অভিনন্দন জানিয়েছেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “উনি ভাল আধিকারিক। এই পুরস্কার তাঁকে আরও ভাল কাজ করতে উৎসাহ দেবে।”
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ১৪ই আগস্ট ফি বছরই কেন্দ্রের তরফে এই শিরোপা দেওয়া হয়ে থাকে। চারটি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ‘প্রেসিডেন্ট’স পুলিশ মেডেল ফর গ্যালনটরি’, ‘পুলিশ মেডেল ফর গ্যালানটরি’, ‘প্রেসিডেন্ট’স পুলিশ মেডেল ফর ডিসটিংগুইশড সার্ভিস’ ও ‘পুলিশ মেডেল ফর মেরিটোরিয়াস সার্ভিস’। সাব ইন্সপেক্টর জয়ন্তকুমার চক্রবর্তী বর্তমানে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের অফিসার ইনচার্জ। ১৯৯৫ সালের ৪ ডিসেম্বর কনস্টেবল হয়ে তাঁর পুলিশের চাকরি জীবনের শুরু। রাজ্য পুলিশের ১১ নম্বর সশস্ত্র বাহিনীর কনস্টেবল ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর পদে উন্নিত হন। বর্ধমানে পোস্টিং হয় তাঁর। ২০০৪ সালেই তিনি পুরুলিয়া আসেন। সেই সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন থানায় কর্মরত হয়ে একের পর এক সাফল্য পান। পুরুলিয়া মফস্বল, নিতুড়িয়া, জঙ্গলমহল বান্দোয়ান, জয়পুর, রঘুনাথপুর, ঝালদা থানা সহ তুলিন ফাঁড়িতে তিনি কর্মরত ছিলেন। জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের দায়িত্ব পালন করার আগে তিনি ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা তুলিন ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ ছিলেন। ঝাড়খণ্ড সীমানাকে ব্যবহার করে দুষ্কৃতীরা যাতে কোনও অপরাধ সংগঠিত করতে না পারে, সেই কাজে যথেষ্ট ছাপ ফেলেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ডার্বির হ্যাংওভার, এবার কলকাতা লিগে পয়েন্ট নষ্ট করল মোহনবাগান]
এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ ২০২২ সালে ঝালদার কুকি এলাকায় গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে পথ ডাকাতির ঘটনায় ছ’জন দুষ্কৃতীকে ভিন রাজ্য থেকে গ্রেপ্তার। সেই সঙ্গে লুঠ হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার। রঘুনাথপুরে থাকাকালীন সেই সময় আদ্রার দুবরাডির একটি গ্যাং শিল্প শহরে চুরির কাজে যুক্ত ছিল। এই ঘটনার কিনারা করে ওই গ্যাংকে পাকড়াও করেন। ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি সাব ইন্সপেক্টর পদে উন্নিত হন। স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপে থাকাকালীন পুরুলিয়া মফস্বলে বাবা-ছেলের যে খুনের কিনারা হয়েছিল তাতে ভূমিকা ছিল তাঁর। একইভাবে শহর পুরুলিয়ার এটিএম ভেঙে ৩৬ লাখ টাকা লুঠ করে নেওয়ার ঘটনার কিনারাতেও তিনি দক্ষতার ছাপ রাখেন। বাঘমুন্ডির চন্দন কাঠ চুরির কিনারা, পুরুলিয়া শহর থেকে গাড়ি চুরির ঘটনায় যুক্ত ছিল বিহারের ঔরঙ্গবাদের দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনার কিনারাতেও এই আধিকারিকের অবদান ছিল।
নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার ভাজনঘাট এলাকার আদি বাসিন্দা জয়ন্তকুমার চক্রবর্তীর বয়স ৫২। কিন্তু পঞ্চাশ পার হওয়া এই আধিকারিক জঙ্গল যুদ্ধেও দক্ষ। পুরুলিয়া মফস্বলের কৈলাস কালিন্দী, জয়পুরের বটম মুদির মতো দুষ্কৃতীদেরকে তিনি মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। রঘুনাথপুরে স্বামী হারানো তিন কন্যা সন্তান নিয়ে অসহায় মহিলার পরিবারকে তিনি ফি মাসে আর্থিক সাহায্য করে থাকেন। যতদিন বাঁচবেন এই সাহায্য করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। এছাড়া কোভিডের সময় রঘুনাথপুরে থাকাকালীন তাঁর মানবিকতার একাধিক পরিচয় পেয়েছে ওই শিল্প শহর।
