সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: অজ্ঞাতবাস সেরে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর পাহাড়ে পা রেখেছেন রোশন গিরি (Roshan Giri)। আগামী ৬ তারিখ শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বিমল গুরুংয়ের জনসভার মহড়া হিসেবে রবিবার কার্শিয়াংয়ে (Karseong)তিনি সভা করলেন। বুঝে নিতে চাইলেন, এখনও পাহাড়ে তাঁদের কতটা প্রভাব রয়েছে। তবে তাতে বোধহয় ব্যর্থই হলেন গুরুংয়ের ডেপুটি। এদিন কার্শিয়াংয়ের সভায় বড়জোড় শ পাঁচেক লোকের সমাগম হয়েছিল। সভা থেকে বিজেপির তীব্র নিন্দা করে ফের তৃণমূলের হাত ধরে একুশের লড়াইয়ের কথা বললেন রোশন গিরি।
হারানো জমি উদ্ধার করে ফের জাঁকিয়ে বসা নয়, আপাতত বিমল গুরুং (Bimal Gurung)-রোশন গিরিদের লক্ষ্য, পাহাড়ে ফেরা। পুরনো ঠাঁই ফিরে পাওয়া। সেই ২০১৭ সালের জুনে পাহাড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার বৈঠকে হামলা চালিয়ে, হাজারটা মামলায় জড়িয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন তাঁরা, তারপর দু-একবার দিল্লিতে দেখা গিয়েছিল রোশন গিরিকে। বারবার পাহাড়ের তৎকালীন বিজেপি সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তিনি ছুটতেন দিল্লিতে। জানাতেন গোর্খাল্যান্ডের দাবি। তারপর কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। পাহাড়ে সাংসদ বদল হয়েছেন। তবে জনপ্রতিনিধি এখনও বিজেপিই।
[আরও পড়ুন: অব্যাহত দলবদলের জল্পনা, মন্ত্রিত্ব ত্যাগের পর প্রথম সভায় কী বললেন শুভেন্দু?]
কিন্তু বিজেপি মোর্চাদের কোনও গুরুত্বই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুললেন রোশন গিরি। কার্শিয়াংয়ের সভায় বললেন, ”তিনবার আমরা বিজেপিকে সুযোগ দিয়েছি পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ করার। তিনবার সাংসদ নির্বাচন করেছি বিজেপি থেকে। কিন্তু কেন্দ্রের ক্ষমতায় বিজেপি আসার পরও কোনও লাভ হয়নি। বিজেপি মোর্চাদের মানুষ বলেই মনে করে না, গুরুত্বই দেয় না।” এদিন তিনি গুরুংয়ের কথার সুর ধরে ফের স্পষ্ট করে দেন, একুশের আবার তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরুক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হোন – এটাই তাঁদের আশা। তাই পাহাড়ে ভোটের লড়াইয়ে তৃণমূলের সঙ্গেই থাকবেন তাঁরা। পাশাপাশি বর্তমান জিটিএ অর্থাৎ অনীত থাপা পরিচালিত সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সরব হন রোশন গিরি। জিটিএ-তে অডিটের দাবি তোলেন।
[আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ, দেওয়াল ভেঙে পাঁচিল তুলে দিল কর্তৃপক্ষ]
তবে এদিনও ফের গোর্খাল্যান্ডের কথা উল্লেখ করেন রোশন গিরি। সভার পর সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে প্রশ্ন করা হয় – মমতাকে সমর্থন জানিয়ে কীভাবে গোর্খাল্যান্ডে দাবিতে অনড় তাঁরা? মমতা তো সম্পূর্ণ গোর্খাল্যান্ড বিরোধী। এর কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি তিনি। জানান যে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। সবমিলিয়ে, গুরুংয়ের প্রত্যবর্তনের পর পাহাড় রাজনীতির দিকে নজর রাখা ওয়াকিবহাল মহলের মত, এই মুহূর্তে নিজেদের অ্যাজেন্ডা নিয়ে যেন কিছুটা বিভ্রান্ত তাঁরা নিজেরাই। গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গে রোশন গিরির উত্তর তারই ইঙ্গিতবাহী।