দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: ক্যানিংয়ের (Canning) তিন তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের সিট গঠন করল জেলা পুলিশ। নেতৃত্বে থাকবেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত অধরা মূল অভিযুক্ত। তার ফলে নিহতের পরিবারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যে ছিল পুলিশ ফাঁড়ি। তা সত্ত্বেও কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, উঠছে প্রশ্ন। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের ভূমিকা।
বৃহস্পতিবার সকালে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় যাওয়ার পথে ক্যানিং থানার গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মতলা এলাকায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন মাঝি এবং তাঁর দুই সহকর্মী ঝন্টু হালদার ও ভূতনাথ প্রামানিক। শুক্রবার সকালে দেহগুলি ময়নাতদন্তের পর গ্রামে আসে। কঠোর পুলিশি নিরাপত্তায় দেহগুলি সৎকার করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, স্বপন মাঝিকে দু’টি গুলি করা হয়। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপানো হয়। অন্যদিকে, ভূতনাথের শরীরে মেলে একটি গুলির চিহ্ন। কিন্তু ঝন্টু হালদারের শরীরে কোনও গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র অস্ত্র দিয়েই কুপিয়ে তাঁকে খুন করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোটদানের আরজিতে তৃণমূল সাংসদদের চিঠি শুভেন্দুর, বয়ান নিয়ে আপত্তি সৌগতর]
এই ঘটনার পর থেকে পুরুষশূন্য গোটা এলাকা। বহু বাড়িতে তালা লাগিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পুলিশবাহিনী টহল দিচ্ছে এলাকায়। ধর্মতলা এলাকায় বসেছে পুলিশ পিকেট। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে নিহতের পরিবারের তরফ থেকে ছ’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে। নিহত স্বপন মাঝির দাদা মধু মাঝি ক্যানিং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হল – রফিকুল সর্দার, জালালউদ্দিন আখন্দ, বশির শেখ, বাপি মণ্ডল, এবায়দুল্লাহ মণ্ডল ও আলি হোসেন লস্কর। এর আগেও একাধিক খুনের ঘটনা নাম জড়িয়েছে রফিকুলের। পাঁচ মাস আগে জামিনে মুক্তি পায় সে। অস্ত্রশস্ত্রের খোঁজে ইতিমধ্যেই তিন দফায় পুলিশ রফিকুলের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি কোনও অস্ত্রশস্ত্র। উদ্ধার হয়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বন্দুকও। খুনে অভিযুক্তরা মোটর সাইকেলে চেপে এলাকা ছেড়ে পালায়। তারপর গা ঢাকা দেয় তারা। ইতিমধ্যেই অপরাধীদের ধরার জন্য ক্যানিং, জয়নগর, কুলতলি, বাসন্তী-সহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে তল্লাশি।
শুক্রবার ঘটনাস্থলে যায় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেন তাঁরা। এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরণ না হওয়া বেশ কয়েকটি বোমা পাওয়া গিয়েছে। বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা শুক্রবার সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে। এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “৫ সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নাকা তল্লাশি চলছে। খুব শীঘ্রই দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।”