শুভঙ্কর বসু, ছোট আঙারিয়া: তপন শুকুরের কথা মনে আছে? ছোট আঙারিয়া কিংবা বক্তার মণ্ডল? এবার সব ঠিক ঠিক মনে পড়ে যাচ্ছে, তাই না? তাহলে জয়ন্ত পাত্র? আবার গুলিয়ে গেল তো? গোলানোরই কথা।
২০০১ সালের ৪ জানুয়ারির শীতের রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার ছোট আঙারিয়ায় বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে যে ক’জন তৃণমূল কর্মী আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন জয়ন্তও।“ও তখন বছর একুশের তরতাজা যুবক। শেষ দেখা গিয়েছিল ঘটনার মাসখানেক আগে।” বলতে গিয়ে হাঁপাচ্ছিলেন জয়ন্তর সত্তরোর্ধ্ব বাবা নিমাই পাত্র। রাজ্যে পালাবদলের পর সবই পেয়েছে গড়বেতা। ছোট আঙারিয়ার আশপাশের বড়মুড়া এলাকায় এই বৃদ্ধের বাড়ির পাশের রাস্তাও মোরাম থেকে পিচ হয়েছে। কিন্তু তাঁর কপালে জোটেনি কিছুই। সেই পুরনো মাটির দেওয়াল। খসে পড়া খড়ের চালা। যার পরতে পরতে দৈন্যের ছাপ স্পষ্ট।
[আরও পড়ুন: সেনাদের আরও নিরাপত্তা চায় শহিদ বাবলু সাঁতরার পরিবার]
দু’বার পক্ষাঘাতে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। জয়ন্তর মা-ও গত হয়েছেন দু’বছর হল। এখন আর ছেলের মুখটাও ভাল করে মনে পড়ে না। বলতে বলতে চোখের কোনা জলে ভরে উঠছিল জয়ন্তর বাবার। প্রশ্ন করলাম, আপনি কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি? আক্ষেপের সুরে বৃদ্ধের উত্তর, “ওরা আমার সঙ্গে কথা বলে না। মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়।” ওরা কারা? “জয়ন্তর দলেরই লোক। আমার সব কার্ডে লেখা – আমি ধনী। আমি ‘এপিএল’। তাই চাল পাই না, আটা পাই না। আর বাড়ির অবস্থা তো দেখছই।” পুলিশের কাছে ছেলের খোঁজখবর করেননি? “করেছি। পুলিশ একবার এসেছিল।” সংসার চলে কীভাবে? “চলে না। ছোট ছেলের মাথার ব্যামো। বউমা- ছেলে যা করেকম্মে আনে, তা-ই খাই।” সরকারের কাছে কোনও আবেদন আছে আপনার? হাতজোড় করে বৃদ্ধ বললেন, “এই বয়সে এসে আমার আর চাওয়ার কিছু নেই। তবু যদি পরিবারটা বাঁচে, তার ব্যবস্থা যদি সরকার করে।
[আরও পড়ুন: ‘টাকার বাক্স দিয়ে বাংলায় ভোট হবে না’, নাম না করে ভারতীকে কটাক্ষ মমতার]
জয়ন্ত তো ওদেরই লোক ছিল। ভোট দেবেন? দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বৃদ্ধ বললেন, “দেব। ওটা তো অধিকার। এর জন্যই তো এতকিছু!” কিন্তু যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিপিএমের এত বছরের রাজ্যপাটের ভিত নড়ে উঠেছিল, সেই আক্রান্ত পরিবারের কি না এমন দশা! খোঁজ নিলাম স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। শোনামাত্র তাঁরা বললেন, “ওই পরিবারের নাম সিপিএমই ‘এপিএল’ তালিকায় পাঠিয়েছে। আমরা একাধিকবার ওটা সংশোধনের চেষ্টা করেছি। ওই পরিবারেরও সহযোগিতা দরকার।” শেষপর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিধায়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “এরকমটা তো হওয়ায় কথা নয়। সরকারি সাহায্য চাল, আটা, ডাল – সবই তাঁর পাওয়ার কথা। ভোট মিটলেই বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।”
The post ‘ছেলের মুখ ভাল করে মনে পড়ে না’, ভোটের আগে এমনই সুর ছোট আঙারিয়ার বিধ্বস্ত পরিবারে appeared first on Sangbad Pratidin.
