দেব গোস্বামী, বোলপুর: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তন আচার্য মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই গোটা দেশের পাশাপাশি শান্তিনিকেতনেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতেই সোমবার সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহে আয়োজন করা হয় বিশেষ মন্দির ও স্মরণ। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিনয় কুমার সোরেন ছাড়াও বিভিন্ন ভবনের অধ্যক্ষ, জনসংযোগ আধিকারিক-সহ অধ্যাপক ও পড়ুয়ারা উপস্থিত হন।
শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহে আয়োজন করা হয় বিশেষ মন্দির ও স্মরণ। নিজস্ব চিত্র
এদিন প্রথা অনুযায়ী বিশেষ মন্দিরে আচার্য হন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ হালদার। তিনিও মন্ত্র পাঠ ছাড়াও প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আচার্য মনমোহন সিংহের স্মৃতিচারণ করেন। এদিন বৈদিক মন্ত্রপাঠ, রবীন্দ্র সংগীত-সহ মূল্যবান স্মৃতিচারণের মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রাক্তন আচার্যকে। 'তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই। কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই', গানের মধ্যে দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান সংগীত ভবনের পড়ুয়ারা।
শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহে আয়োজন করা হয় বিশেষ মন্দির ও স্মরণ। নিজস্ব চিত্র
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন দীর্ঘদিন কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতীর আচার্য পদে ছিলেন তিনি। রবীন্দ্র ভবনের সাদা ক্যানভাসে তাঁর স্বাক্ষর এখনও জ্বলজ্বল করছে। বর্তমানে শান্তিনিকেতন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতির তকমা পেয়েছে। এর পিছনেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। আজ সবই স্মৃতি। বিষন্ন শান্তিনিকেতন।
বিশ্বভারতীতে মনমোহন সিং। ফাইল চিত্র
২০০৮ সালের ৬ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন মনমোহন সিং। সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন যোজনা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রণব মুখোপাধ্যায়, তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী, তৎকালীন উপাচার্য রজতকান্ত রায়-সহ অন্যরা। গাড়িতে চড়ে নয়, হেঁটে আশ্রম চত্বর ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানগুলি ঘুরে দেখেছিলেন তিনি। পরে শান্তিনিকেতন গৃহ, আম্রকুঞ্জে জহর বেদীতে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এই অনুষ্ঠানেই প্রখ্যাত শিল্পী কেজি সুব্রামানিয়ামকে 'অবন-গগন' পুরস্কার দেওয়া হয়। ঘুরে দেখেছিলেন রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালাও। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিনয় কুমার সোরেন জানান," অত্যন্ত বিনয়ী স্বভাবের ছিলেন প্রাক্তন আচার্য। শান্তিনিকেতনে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে আপ্লুত হয়েছিলেন। বিশ্বভারতীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল আচার্যের। বিদগ্ধ পন্ডিত দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়ানে শোকাহত সকলেই। শ্রদ্ধার্ঘ জানাতেই উপাসনা গৃহে বিশেষ মন্দিরের আয়োজন।" বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান,"প্রাক্তন আচার্যকে স্মরণ করতেই শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ মন্দিরের আয়োজন। তাঁর অবদান স্মরণ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পড়ুয়া থেকে আশ্রমিক সহ স্থানীয় বাসিন্দা সকলেই ৷"