shono
Advertisement

চাকরি ছেড়ে ৬০টি কুকুর-বিড়াল নিয়ে শ্রীনাথের ‘অনাথ আশ্রম’

বরাবর শ্রীনাথবাবুকে সহযোগিতা করেছেন তাঁর বাবা-মা। The post চাকরি ছেড়ে ৬০টি কুকুর-বিড়াল নিয়ে শ্রীনাথের ‘অনাথ আশ্রম’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 01:19 PM Sep 17, 2019Updated: 01:23 PM Sep 17, 2019

সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: রাস্তার কুকুর-বিড়ালদের ভালবেসে তাদের জন্য নিজের বাড়িতেই ভালবাসার এক ‘অন্য পৃথিবী’ গড়ে তুলে নজির স্থাপন করেছেন ঊনষাট বছরের এক ব্যক্তি। ডোমজুড় থানার মাকড়দহ চৌধুরিপাড়ার বাসিন্দা শ্রীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিজের দোতলা বাড়ি জুড়ে রাস্তার অসুস্থ ও আহত কুকুর-বিড়ালদের জন্য আস্ত এক ‘অনাথ আশ্রম’ গড়ে তুলেছেন। এদের মধ্যে কারও গাড়ি দুর্ঘটনায় কাটা পড়েছে চারটি পা, কারও বা ভেঙেছে কোমর। কারও নষ্ট হয়ে গিয়েছে দুটি চোখ। এরা সকলেই রাস্তার পাশের অবহেলিত কুকুর ও বিড়াল। যারা প্রতিদিন পথচলতি মানুষের চোখে খুঁজে বেড়ায় একটু সহানুভূতি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহানুভূতির বদলে এদের কপালে জোটে নিদারুণ পৈশাচিক যন্ত্রণা। এই ধরনের যন্ত্রণাক্লিষ্ট কুকুর, বিড়ালদের সস্নেহে কোলে তুলে বাড়ি নিয়ে আসেন শ্রীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

[আরও পড়ুন: দক্ষিণ কলকাতাতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ, ঘোষণা পুরসভার]

এলাকায় তিনি এক ডাকে ‘চাঁদুবাবু’ নামে পরিচিত। কুকুর-বিড়ালদের তিনি রাস্তা থেকে তুলে এনে তাদের চিকিৎসা করে সন্তান স্নেহে প্রতিপালন করেন। বহুদিন যাবৎ তিনি এই কাজ করে চলেছেন। তাঁর বাড়ির একতলা ও দোতলা জুড়ে বর্তমানে প্রায় ৬০টি কুকুর-বিড়ালের নিত্যসেবা চলে। বিশাল বাড়িটিতে ঘরের সংখ্যা নেহাত কম নয়, তবুও সেগুলি এখন পথ-পুকুর ও বিড়ালদের দখলে। শ্রীনাথবাবুর বাবা শিবেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন স্বনামধন্য চিকিৎসক। ৯০ বছরের বৃদ্ধা মা অনিমা বন্দ্যোপাধ্যায় নিচের তলার একটি ঘরে থাকেন আর অকৃতদার শ্রীনাথবাবুর স্থান ঠাকুরঘরে। তিনি জানালেন, এইসব কুকুর-বিড়ালদের খাওয়া-দাওয়া এবং ওষুধপত্রের জন্য প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। মায়ের ইচ্ছানুসারে তাঁর পেনশনের টাকা ও কিছু জমা টাকার সুদ থেকেই এই বিপুল পরিমাণ খরচ সামলাতে হয় শ্রীনাথবাবুকে। আগে নিজে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করলেও কুকুর-বিড়ালের জন্য তাঁকে চাকরি ছাড়তে হয়েছে। এখন বাড়িতে শুধুমাত্র কুকুর-বিড়ালের জন্য রান্না হয় আর নিজেরা খান কেনা খাবার। এদের জন্য প্রতিমাসে শুধু চালই লাগে ৯০ কেজি। এছাড়াও ৩০ কেজি চন্দ্রমুখী আলু, মাছ, মাংস, ডিম, দই, সোয়াবিন, ডাল ও বিস্কুট লাগে প্রতি মাসে। খাবারের তালিকা এখানেই শেষ নয়। এরপরেও আছে বস্তা বস্তা প্যাকেটজাত শুকনো খাবার ও ইনস্ট্যান্ট গ্রেভি।

এত বড় ‘পরিবার’ দেখভালের জন্য শ্রীনাথবাবু মাত্র দু’ঘণ্টা ঘুমানোর সময় পান। তিনি ছাড়াও রয়েছেন তিনজন পরিচারিকা। ৬০টি স্টিলের থালায় এদের খাবার দেওয়া হয়। খাওয়া হয়ে গেলে সেগুলি আবার পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখা হয়। এতগুলি প্রাণী সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের কীটনাশক দিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে ঘর পরিষ্কার করতে হয়। চিকিৎসক তন্ময় কাঁড়ার নিয়মিত প্রতিটি কুকুর-বিড়ালের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন এবং প্রয়োজনে তাদের চিকিৎসাও করেন। প্রত্যহ বিনা পারিশ্রমিকে অসুস্থ কুকুর-বিড়ালদের ক্ষতস্থান পরিচর্যা করেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীনাথবাবু জানালেন, কিছু মানুষ অহেতুক রাস্তার অসহায় কুকুর-বিড়ালের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আনন্দ পান। এইসব নরপিশাচদের জন্য আরও কড়া আইন আনা এবং তার যথাযথ প্রয়োগ উচিত।

[আরও পড়ুন:রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ২ কিশোরকে গুলি, ঘটনায় থমথমে কোলিয়ারি এলাকা]

তিনি জানান, আড়াই বছর আগে একটি কুকুরকে প্রায় ২০-২৫ জন মানুষ পাগল আখ্যা দিয়ে মারছিল। তিনি সেই রুদ্রমূর্তিধারী মানুষদের হাত থেকে কোনওরকমে কুকুরটিকে বাঁচিয়ে বাড়িতে আনেন। তাকে সেবা শুশ্রূষা করে বাঁচিয়ে তুললেও অমানুষিক প্রহারে কুকুরটির দু’টি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। এখন কুকুরটি ‘লালমোহন’ নামে শ্রীনাথবাবুর পরিবারের অন্যতম সদস্য। শ্রীনাথবাবু জানান, তাঁর কোনও পোষ্যের মৃত্যু হলে তাকে তাঁর নিজের জমিতেই শাস্ত্র মতে সৎকার করা হয়। তিনি বলেন, পথ-কুকুর ও বিড়ালের জন্য সরকারি উদ্যোগে হাওড়া জেলায় একটি স্থায়ী আশ্রয়স্থল খুব দরকার। তাহলে একদিকে যেমন এইসব অসহায় অবলা জীবগুলির জীবন রক্ষা পায়, অন্যদিকে তেমনি পথচলতি মানুষরাও কুকুর দংশনের ভীতি থেকে মুক্তি পান। স্থানীয় বাসিন্দা বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, চাঁদুবাবুর এই কর্মকাণ্ডকে অনেকে পাগলামি বলেন। তবে চাঁদুবাবুর মতো আরও কিছু ‘পাগল’ থাকলে ভাল হত।

The post চাকরি ছেড়ে ৬০টি কুকুর-বিড়াল নিয়ে শ্রীনাথের ‘অনাথ আশ্রম’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement