অর্ক দে, বর্ধমান: যে সমস্ত স্কুলে বাংলা শিক্ষা পোর্টালের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হয়নি, সেই সব স্কুলে পড়ুয়াদেরই 'তরুণের স্বপ্ন' প্রকল্পে টাকা গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ট্যাব দুর্নীতির প্রাথমিক তদন্তে এমনই মনে করছে পুলিশ। পাশাপাশি, ট্যাব কেলেঙ্কারির ঘটনায় বর্ধমান জেলা পুলিশের হাতে মালদহ থেকে গ্রেপ্তার হাসেন আলি-সহ পাঁচজনের মধ্যে কী যোগসূত্র রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও আরও কেউ এই চক্রে জড়িত কিনা, তা নিয়েও তদন্ত করছে পুলিশ।
পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা নয়ছয়ের ঘটনার মূল চক্রী হিসেবে হাসেন আলিকেই প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করছে পুলিশ। বুধবার এই ঘটনায় ধৃত চারজনের মধ্যে রকি শেখ মালদহের ভগবানপুর কেবিএস স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক বলে জানা গিয়েছে। অন্যান্য ধৃতদের মধ্যে, শ্রবণ সরকার স্থানীয় একটি ঋণ প্রদানকারী শাখায় কাজ করত। দেড় মাস আগে সে এই কাজে যোগ দিয়েছে। এছাড়া স্থানীয় কৃষ্ণগঞ্জ এলাকায় পঞ্চায়েত অফিসের পাশে তার একটি জেরক্সের দোকান রয়েছে। গত মাসে তার বিয়ে হয়। শ্রবণের বাবা জিতেন্দ্রনাথ মালদহের কালিয়াচক এলাকায় শাসকদলের এসসি শাখার সভাপতি বলে জানান। অন্যদিকে, অপর অভিযুক্ত পিন্টু শেখ রাজমিস্ত্রির কাজ করে বলে পরিবার সূত্রে খবর। এদের সকলের বাড়ি মালদহের বৈষ্ণবনগর এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ট্যাবের টাকা তছরূপের ৫০ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কথা জানা গিয়েছে। জেলায় মোট ২৭ টি স্কুলের ৮৫ জন পড়ুয়ার 'তরুণের স্বপ্ন' প্রকল্পে অ্যাকাউন্টের ঢোকেনি বলে অভিযোগ মেলে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টের নথি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে টাকা পৌঁছয়নি বলে জানা যায়। পুলিশ ৮১ টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে সমস্ত স্কুল দীর্ঘদিন ধরে 'বাংলা শিক্ষা' পোর্টালের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেনি সেই সমস্ত স্কুলে এই ধরনের অ্যাকাউন্টগুলিতে 'আনঅথরাইসড অ্যাকসেস' করা সহজ হয়েছে দুষ্কৃতীদের ক্ষেত্রে। সাধারণ এই সমস্ত অ্যাকাউন্টগুলিতে সহজ-সরল পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকে।
২০১৯ সালে প্রথম রাজ্যে সরকারের তরফে 'তরুণের স্বপ্ন' প্রকল্প চালু করা হয়। সেই সময় স্কুলগুলির তরফে এই পোর্টালের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট চালু করা হয়। এরপর অনেক স্কুল সেই পাসওয়ার্ডের পরিবর্তন করলেও অধিকাংশ স্কুলে তা করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে। ফলে, দুষ্কৃতীদের পক্ষ অনুমান করা সহজ হয়েছে। অন্যদিকে, পেশাগত কারণে ধৃতদের তথ্য পাওয়া সহজ হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অবৈধভাবে পড়ুয়াদের তরুণের স্বপ্ন পোর্টালে তথ্য পরিবর্তন করে এই কাজ করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার সায়ক দাস জানান, "এই ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে কোনোও যোগসূত্র রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পিছনে আরোও কোনও বড় চক্র যুক্ত রয়েছে কিনা, এমনকী অন্য জেলার ঘটনার সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ধৃতের যোগাযোগ ছিল কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"