বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: বত্রিশ বছরের শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসর (Retirement) নিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও ভোলেননি তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের কথা। তাই সেই তাদের পড়াশোনার উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে তাঁদের উৎসাহিত করার জন্য নিজের বাবা-মায়ের নামে স্কলারশিপ (Scholarship) চালু করে তাঁদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে তিনি দান করলেন তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা। তিনি শীলা বিশ্বাস। নদিয়ার শান্তিপুর হিন্দু হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। এবার অবসর নিয়েছেন।
১৯৯০ সালে শান্তিপুর (Santipur) হিন্দু হাইস্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দিয়েছিলেন শীলা দেবী। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি শিক্ষকতা (Teaching) থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। যদিও অবসর গ্রহণের পর তিনি তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য টাকা থেকে স্কুলকে ১ লক্ষ টাকা দান করলেন। ওই শিক্ষিকা তাঁর মা যমুনা দেবী এবং বাবা সুবলবাবুর নামে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে একটি স্কলারশিপ চালুর ইচ্ছা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে দান করেছেন, তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা। ওই শিক্ষিকার আসল বাড়ি শান্তিপুর ব্লকের ফুলিয়ার তারাপুরে। যদিও শিক্ষকতা চলাকালীন তিনি কল্যাণীতে থাকতেন। তবে কাজের সুবিধার জন্য তিনি শান্তিপুর একটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন। ১৯৯০ সালে তিনি ওই স্কুলের শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন।
[আরও পড়ুন: থার্মোমিটার ভেঙে পারদ বের করে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ! মৃত্যুমুখে ১৯ বছরের ছেলে]
এরপর ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি স্কুলে ভূগোল (Geography) ও সোশ্যাল সায়েন্স (Social Science) পড়াতেন। তাঁর ইচ্ছে, বাবা-মায়ের নামে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারীকে স্কলারশিপ বাবদ আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়া হোক। স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষিকার ইচ্ছা অনুযায়ী, তেমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিস টিকাদার জানিয়েছেন, ”এর আগে অবসর নেওয়ার সময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেও শীলা বিশ্বাসের মত কেউ আর্থিক সাহায্য এর আগে দেননি। উনি শুধু ১ লক্ষ টাকা দিয়েই আর্থিক সাহায্য করেছেন তা নয়। উনি কথা দিয়েছেন, আগামী দিনে স্কুলের উন্নয়নের জন্য আরও টাকার প্রয়োজন হলে তিনি এগিয়ে আসবেন।” ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শংকরী প্রসাদ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ”শীলা বিশ্বাসের মত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে অনুপ্রেরণা।আমরা চাই, ওই শিক্ষিকার মত অন্যান্য শিক্ষিতরাও এরকমভাবে স্কুলের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে স্কুলের উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসুন।”
[আরও পড়ুন: গল্প হলেও সত্যি, এই বাঙালি দম্পতির জীবন কাহিনি থেকেই তৈরি ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’]
যদিও এই বিষয়ে শিক্ষিকা শীলা বিশ্বাস বিশেষ কিছু বলতে রাজি হননি।অবসর গ্রহণের পর একদিন স্কুলে এসে তিনি তার সহ-শিক্ষকদের জানিয়েছেন, ”ছাত্র-ছাত্রীরা আমার খুবই প্রিয়। আমি তাদের পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমার বাবা মায়ের নামে একটি স্কলারশিপ বাবদ কিছু আর্থিক সাহায্য করার মানসিকতা নিয়েই সামান্য কিছু অর্থ স্কুলের হাতে তুলে দিয়েছি।ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে আরও অর্থের প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন।আমি চেষ্টা করব।” শীলা বিশ্বাসের ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ওই স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
দেখুন ভিডিও: