নন্দন দত্ত, সিউড়ি: দিনেদুপুরে অস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব৷ তাও আবার আদালত চত্বরে৷ অস্ত্র উঁচিয়ে তালিবানি কায়দায় বিচারপ্রার্থীদের মারধর, ভয় দেখানোর অভিযোগ এক দল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে৷ পুলিশের নাকের ডগায় গোটা ঘটনাটি ঘটলেও কিছুই করতে পারেনি পুলিশ! অভিযোগ স্থানীয়দের৷আজ, বুধবার পুলিশের নাকের ডগায় সিউড়ি আদালত চত্বরে মুখে কাল কাপড় বেঁধে দাপিয়ে বেড়ায় একদল দুষ্কৃতী৷ হাতে ধারাল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের মারধর করা হয়৷ দুষ্কৃতীদের হাতে মার খেয়ে গুরুতর জখম হলেন সঞ্জয় খান নামে এক জামিনপ্রাপ্ত অভিযুক্ত৷ তাঁকে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷
এদিনের এই হামলার ঘটনায় জখম ওই ব্যক্তি ১৫ জনের নামে সিউড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা৷ সিউড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গৌড়হরি চন্দ্র জানান, তাঁর চল্লিশ বছরের কর্মজীবনে আদালত চত্বরে এমন মস্তানি করতে কাউকে দেখেননি৷ ঘটনার সূত্রপাত দুই পাড়ার বিবাদকে কেন্দ্র করে৷ সম্প্রতি, সিউড়ির হুসনাবাদের সঙ্গে লালকুঠিপাড়ার মধ্যে সংঘর্ষ বাধে৷ সেই ঘটনায় হুসনাবাদের সঞ্জয় খান-সহ ছজনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়৷ বুধবার দ্বিতীয়ার্ধে সঞ্জয় খান-সহ ছ’জন মুখ্যবিচার বিভাগীয় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন৷ তাদের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক৷ এরপর তারা আদালত থেকে বেরোবার মুখে তাদের ওপর দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়৷ সঞ্জয় খানের অভিযোগ, হামলাকারীদের সকলের মুখ কালো কাপড়ে বাধা ছিল৷ চোখে কালো চশমা৷ লালকুঠিপাড়ার বাসিন্দা শেখ রকির হাতে পিস্তল ছিল৷ বাকিদের কারও হাতে ভোজালি, চাকু টাঙ্গির মত অস্ত্র ছিল। পরিস্থিতির খবর পেয়ে আদালত চত্বরের গায়েই থাকা সিউড়ি থানা থেকে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। ততক্ষণে দুষ্কৃতীদের আক্রমণে জখমদের আদালত চত্বরে ফেলে রেখেই পালিয়ে যায় বাকিরা৷ সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় ও আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, এভাবে প্রকাশ্যে রিভলভার নিয়ে দাপাদাপি দেখে আমরা স্তম্ভিত৷
আদালত চত্বরে পুলিশের সামনেই বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য কালোসোনা মণ্ডল ছুরিকাহত হন৷ একইভাবে গত সপ্তাহে মনোনয়নের নামে প্রকাশ্যে হাতে লাঠি নিয়ে মুখ বেঁধে দাপিয়ে বেড়িয়েছে দুস্কৃতীরা৷ তারই জেরে এই দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটেছে৷ সিউড়ি বাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গৌড়হরি চন্দ্র জানান, তাঁর কর্মজীবনে নকশাল আমলেও আদালত চত্বরে এমন ঘটনা ঘটেনি৷ একমাত্র লোকেশ ঘোষ জেলা জজ থাকাকালীন একবার বোমা পড়েছিল৷ তারপরে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সত্যি নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে৷
