সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘ভূতুড়ে ভোটার’ চিহ্নিত করে তালিকা থেকে বাদ। সেইসঙ্গে ইভিএম ব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করে তোলা। সর্বোপরি ভোটারদেরকে বুথমুখী করতে পাঠদানে, সচেতনতার প্রচারে অভয় বার্তা দেওয়ার কাজে উদ্ভাবনী ভাবনাকে তুলে ধরা। নির্বাচন পরিচালনায় সারা বছর ধরে এমন ভালো কাজের সুবাদে রাজ্যের তিন জেলাশাসককে (DM) পুরস্কৃত করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের ২৩ টি জেলার মধ্যে তিনটি ক্যাটাগরিতে সেরা হওয়ার নিরিখে ‘স্টেট অ্যাওয়ার্ডস ফর বেস্ট ইলেক্টোরাল’ শিরোপায় এই পুরস্কারগুলো দেওয়া হবে।
আগামী ২৫ জানুয়ারি জাতীয় ভোটার দিবসে রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠানে কলকাতার আলিপুরে ভাষাভবন প্রেক্ষাগৃহে ওই সম্মাননা প্রদান করা হবে। ‘ইলেক্টোরাল রোল ক্লিনসিনিং’ অর্থাৎ ভুয়ো ভোটার বাদ দেওয়ার কাজে এই পুরস্কার পাবেন উত্তর ২৪ পরগনা (North 24 Parganas) জেলার জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক শরদকুমার দ্বিবেদী। ‘ওভারঅল পারফরমেন্স ইন ইলেক্টোরাল রোল ম্যানেজমেন্ট’ অর্থাৎ ইভিএম ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে কার্যকরার কাজে পুরস্কৃত হবেন হুগলির (Hooghly) জেলাশাসক মুক্তা আর্য। পুরুলিয়ার (Purulia) জেলাশাসক রজত নন্দা পুরস্কৃত হচ্ছেন ‘ইনোভেটিভ ক্যাম্পেনস অ্যান্ড সিস্টেমেটিক ভোটারস এডুকেশন এন্ড ইলেক্টোরাল পার্টিসিপেশন’ অর্থাৎ ভোটারদেরকে বুথমুখী করতে উদ্ভাবনী ভাবনাকে তুলে আনা। যার মাধ্যমে ভোটাররা সহজেই ভোটদানে হাজির হন।
এবার এই কাজে জেলার ম্যাসকট ‘পলাশমণি’ নির্ভয়ে ভোটদানে প্রচার চালাবে। এই ম্যাসকট প্রশংসিত হয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনেও (Election Commission)। তাদের নির্দেশেই উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলির সঙ্গে পুরস্কার পাচ্ছে পুরুলিয়া। এই ক্যাটাগরিতে বরাবর উজ্জ্বলতার ছাপ রাখে বনমহল পুরুলিয়া। অতীতে ‘ভোটেশ্বর’ ম্যাসকটও পুরস্কার এনে দিয়েছিল এই জেলাকে। পুরস্কৃত হয়েছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী ও রাহুল মজুমদার। ভোটার তালিকায় নাম তুলতে গত বছরের ১২ই আগস্ট থেকে ধারাবাহিক প্রচার শুরু করে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ১৪ই আগস্ট ‘কন্যাশ্রী দিবসে’র প্রাক্কালে কন্যাশ্রীদের নিয়ে সাইকেল র্যালি করে ভোটার তালিকায় নাম তোলার আহ্বান রাখা হয়। সেই সাইকেল র্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন জেলাশাসক রজত নন্দা থেকে পুলিশ সুপার (SP) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই কর্মসূচি নজর কাড়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে।
[আরও পড়ুন: ‘তুমি বড্ড বেশি কথা বলছ’, দল নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় হুমায়ুন কবীরকে ধমক মমতার]
তার পর থেকে জেলার ২০ বিডিও-সহ অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিকরা নিজেদের এক্স হ্যান্ডেল (X Handle)থেকে ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রচার ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চালিয়ে যান। পুরুলিয়া যে ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাচ্ছে এটি দুটি পর্যায়ের। এক ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে নিরন্তর প্রচার। সেইসঙ্গে ভোটারদের নির্ভয়ে বুথমুখী করতে পদক্ষেপ। মদ এবং টাকাকে সরিয়ে ‘পলাশমণি’র হাত ধরে যাতে জেলার ভোটাররা বুথমুখী হতে পারেন এবার তার প্রচার শুরু করবে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ‘পলাশমণি’ যে ঘরেরই মেয়ে!
জেলা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীর মূল ভাবনায় এই ‘পলাশমণি’ ম্যাসকট আত্মপ্রকাশ করেছে। এই ম্যাসকটের মধ্য দিয়ে একাধিক বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এক কন্যাশ্রী। দ্বিতীয় এই জেলা বসন্তে পলাশময়। তাই কন্যাশ্রী ‘পলাশমণি’ পুরুলিয়ার সাজে পলাশ ফুলে সেজে উঠেছে। তৃতীয় তার মুখ বিশ্বে নজরকাড়া ছৌ নৃত্যের মুখোশের আদলে। সেই সঙ্গে এই জেলার প্রাণের উৎসব টুসুকে যেমন আমরা ‘টুসুমণি’ বলে থাকি এখানেও ‘পলাশমণি’ বলে ভালোবাসা, আদরের পরশ রয়েছে।
সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, ” নির্ভয়ে বুথে আসুন। ভালোবাসা, আদরে ভোটারদেরকে আমরা বুথমুখি করতে চাই। ‘পলাশমণি’ সেই বার্তায় দেবে।” আগামী ২৫ জানুয়ারি জাতীয় ভোটার দিবসে বনমহলের এই জেলায় সাইকেল র্যালি, ট্যাবলো, নাটকে ‘পলাশমণি’ এই বার্তা দেওয়া শুরু করবে। যা চলবে লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election)দিনের আগে পর্যন্ত। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ” এটা সম্পূর্ণভাবে আমাদের টিম ওয়ার্ক। ভোটারকে বুথমুখী করতে ‘পলাশমণি’ ধারাবাহিক প্রচার চালাবে। “
[আরও পড়ুন: শর্তসাপেক্ষে রামপুজোর অনুমতি, বঙ্গ বিজেপিকে মিছিলের রুট বেঁধে দিল হাই কোর্ট]
অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় যেখানে ভুয়ো ভোটারের ছড়াছড়ি। সেই এলাকা থেকে ‘ভূতুড়ে ভোটার’ বাদ দেওয়া রীতিমতো চ্যালেঞ্জের ছিল। একজন ভোটার তার সচিত্র পরিচয়পত্র যাতে কোনওভাবেই দুই জায়গায় না পান। অর্থাৎ বিবাহ সূত্রে বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন। কিন্তু দুই বিধানসভা এলাকায় নাম থেকে গিয়েছে। এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েই ভালো কাজ করার জন্যই উত্তর ২৪ পরগনা এই সম্মান পাচ্ছে। এছাড়া ইভিএম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওই ব্যবস্থাপনায় কোথাও কোনও ভুল ত্রুটি রয়েছে কিনা, তা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে সেই কাজেও রাজ্যে আলাদা ছাপ ফেলে হুগলি। যা প্রশংসিত হয় জাতীয় নির্বাচন কমিশনেও।