সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: 'বাঘবন্দি' অভিযানে হাতি তাড়ানোর কৌশলেই বিপত্তি! জঙ্গল বদল করল বাঘিনী জিনাত! আগুনের গোলা নিয়ে হুলাপার্টির জঙ্গল ঘিরে রাখা। সেই সঙ্গে অভিযানে অংশ নেওয়া বনকর্মীদের যথেচ্ছ পটকা ফাটানো! সেই কারণেই রাইকার জঙ্গল থেকে মানবাজারের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে সে? এই ঘটনায় নতুন করে দুশ্চিন্তা বেড়েছে বন আধিকারিক, কর্মীদের।
একাংশের অনুমান, হাতি, লোকজন নিয়ে জঙ্গল ঘিরে রাখা হচ্ছে। বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার মতো আওয়াজও পাওয়া গিয়েছে। সেজন্যই ওড়িশার বাঘিনী জিনাতের স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রায় ২০ কিমি হেঁটে শুক্রবার ভোরে জঙ্গল বদল করেছে সে। মানবাজার দুই ব্লকের বোরো থানার কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের মানবাজার দুই বনাঞ্চলের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে জিনাত।
তবে এই জঙ্গল নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে বনকর্মীদের। এই জঙ্গল রাইকার মতো অত ঘন নয়। তাছাড়া সবচেয়ে বড় বিপদ মাত্র এক কিমির মধ্যেই লোকালয়। সবে মিলিয়ে আতঙ্ক আরও চেপে বসেছে। এদিকে উৎসাহী মানুষজন ডাঙরডি মোড়ের কাছে ভিড় জমাচ্ছেন। তবে রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, "পটকা ফাটানোর আগেই, অভিযান শুরুর মধ্যেই বাঘটি পাশ দিয়ে এদিকে চলে আসে। এরপর অভিযান কিভাবে হবে তার রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।" এদিকে বৃহস্পতিবার রাইকা পাহাড় লাগায়ো কেন্দাপাড়া এলাকায় অভিযানের সময় ৩ কিমি জাল বিছানো হয়েছিল। ওই জালই নিয়ে এসে এখন এই এলাকায় লাগানো হবে। নতুন এই এলাকার বন জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হবে।
ওই এলাকায় পর্যটকরাও বেড়াতে যান। এছাড়া বনজ সম্পদ কুড়াতেও মানুষজনের আসা যাওয়া রয়েছে। সবে মিলিয়ে বেশ চাপে বনদপ্তর। আইনশৃঙ্খলার যাতে কোনওরকম ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। মাইকিং করে, জঙ্গলে লোকজনকে যেতে বারণ করা হচ্ছে। জঙ্গলের একাধিক পথ রীতিমতো কর্ডন করে রেখেছে সিভিক ভলান্টিয়ার সহ যৌথ বন পরিচালন কমিটির সদস্যরা। জাল বিছানোর পরেই বাঘবন্দি অভিযান শুরু করতে চায় রাজ্যের বন বিভাগ সহ সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় বাঘিনীকে বাগে আনতে যে পন্থা নেওয়া হয়েছে, তার তুমুল সমালোচনা করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। হাতি তাড়াতে সুপ্রিম কোর্ট হুলাপার্টিকে নিষিদ্ধ করেছে। সেখানে এই অভিযানে কীভাবে হুলা পার্টিকে ব্যবহার করা যায়? সেই প্রশ্ন উঠেছে। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশনও জমা হতে পারে।
কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের কর্তারা বলছেন, জিনাত দক্ষিণ বাঁকুড়ার সুতান হয়ে বারো মাইল জঙ্গল থেকে আবার রাইকা পাহাড়ের দিকে ফিরে যেতে পারে। অভিজ্ঞ বাঘিনী নিজের টেরিটরি বাড়াতেও এদিকে চলে আসতে পারে। এদিকে এই জঙ্গলে প্রচুর হরিণও রয়েছে। সেজন্যও জিনাত ঘাঁটি গাড়তে পারে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।