অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: পাহাড়ে ফের অশান্তির আঁচ। ফের গোর্খাল্যান্ডের (Gorkhaland) দাবি উঠছে। আর তাতে একসুরে সরব বিমল গুরুং, বিনয় তামাং (Binay Tamang), অজয় এডওয়ার্ডরা। অর্থাৎ ক্ষমতা হারিয়ে গণতন্ত্র থেকে সরে এসে ফের বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে দার্জিলিংয়ে। গুরুং তো গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর মূল পান্ডা ছিলেনই। কিন্তু হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ড ও তৃণমূল (TMC) নেতা বিনয় তামাংয়েরও তাঁকে সমর্থন পাহাড়ের রাজনীতিকে ফের বদলে দিতে চলেছে। বিশেষত বিনয় তামাংয়ের এই ভূমিকাকে ভালভাবে নিচ্ছে না রাজ্যের শাসকদল। পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্পষ্ট।
সোমবার, নেতাজির জন্মদিনে কালিম্পংয়ে (Kalimpong) এক জনসভার আয়োজন করেছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সেখানেই একমঞ্চে দেখা গেল বিমল গুরুং (Bimal Gurung), বিনয় তামাং, অজয় এডওয়ার্ডদের। সকলেই বক্তব্য রাখলেন, যার সারমর্ম ছিল, উন্নয়নের স্বার্থে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি। বিনয় তামাং বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘‘এই দাবি প্রতিটি গোর্খার। তাঁদের জন্যই পৃথক রাজ্য চাইছি।’’ গুরুং, এডওয়ার্ডদের কথাতেও একই সুর। আন্দোলনের প্রাথমিক রূপরেখাও ঠিক করে দেন গুরুং। তাঁর মত, হিংসাত্মক আন্দোলন নয়, শান্তিপূ্র্ণ পথে আলাদা রাজ্য চেয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হবে মোর্চা। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে দার্জিলিং শহরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা চলাকালীন তৎকালীন মোর্চা সুপ্রিমো গুরুংয়ের বিরুদ্ধে বড়সড় অশান্তির অভিযোগ ওঠে। সাময়িক শান্ত থাকার পর তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। লাগাতার অশান্তি শুরু হয়।
[আরও পড়ুন: আমেরিকায় বন্দুকবাজের তাণ্ডব চলছেই, গুলিবর্ষণে নিহত চিনা কৃষক-সহ ১১]
তারপর কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। এবারও গুরুং বললেন আন্দোলনের কথা, তবে শান্তিপূর্ণ পথে। আসলে জিটিএ (GTA), পুরসভা, বিধানসভা কেন্দ্র – কোনও জায়গাতেই এখন মোর্চার কোনও জনপ্রতিনিধি নেই। নতুন দল গড়ে দার্জিলিং পুরসভা দখলের পরও তা হাতছাড়া হয়েছে হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ডের। ফলে ক্ষমতা হারিয়ে এখন পুরনো গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে ফের তুলে আনছে গুরুং, তামাং, এডওয়ার্ডরা।
[আরও পড়ুন: ‘বিচারপতিদের তো আর ভোটে লড়তে হয় না’, কলেজিয়াম বিতর্কের মাঝেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য রিজিজুর]
তবে যতই একজোট হোন তাঁরা, আলাদা রাজ্যের দাবি যে কোনওভাবেই মাথাচাড়া দিতে পারবে না, তা কড়াভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা তথা বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Arup Biswas)। সোমবার শিলিগুড়ির অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এরকম আন্দোলন হতেই পারে। তবে বাংলাকে পৃথিবীর কোনও শক্তি ভাগ করতে পারবে না। বাংলা অটুট রাখাই আমাদের দায়িত্ব।’’ পাশাপাশি বিনয় তামাং প্রসঙ্গে বলেন, “দলের উর্ধে কেউ নয়। যারা দলের নীতি থেকে বিচ্যুত হবে তাদের বিরুদ্ধেই দল ব্যবস্থা নেবে। তবে বিনয় তামাং লিখিত কিছু জানায়নি দলকে।’’ এই মন্তব্যেই ইঙ্গিত, বিনয় তামাংকে ছেঁটে ফেলার পথে হাঁটতে চায় তৃণমূল।